Seg বিভূতি-রচনাবলী সুরেশ্বর বিমলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ট্রেনের ছাদের দিকে । সব কামরার ছাদে কঁচি ডালপালা চাপানো—কোনোটায় শুকৃনো খড় বিচালি ছাওয়া । বিমল বল্লে—এরোপ্লেন পাছে বোমা ফেলে ট্রেনে, তাই ওরকম করেছে বলে মনে হয় ! সাংহাই ৪৫° মাইল দূরে। হঠর হঠর করে করে সারাদিন ট্রেন কৃষিক্ষেত্র, অনুচ্চ পাহাড়, গ্রাম আর বস্তি পার হয়ে চলেছে, চলেছে। ট্রেনের গতি মন্দ নয়, পুরোনো আমলের এপ্লিন বদলে নতুন এঞ্জিন কেনা হয়েছে, বেশ জোরেই ট্রেন যাচ্ছে। ওদের কামরাতে সাধারণ সৈন্যদল নেই অবিশ্যি । মাত্র জন অাষ্টেক লোক, সবাই অফিসার শ্রেণীর, কিন্তু কেউ ইংরিজী জানে না। মহা অস্থবিধেয় পড়ে গেল ওরা–কিছু দরকার হলে চাওয়া যায় না, নতুন কিছু দেখলে জিগ্যেস করা যায় না যে সেটা কি। দুপুরের দিকে একটা ছোট শহরে গাড়ী দাডাল এবং ওদের কামরাতে একজন সাদা সরু একগুচ্ছ লম্বা দাড়িওয়াল বৃদ্ধ সৌম্যমূৰ্ত্তি ভদ্রলোক উঠলেন, সঙ্গে তার এগারোটি তরুণ যুবা। এদের সবারই বেশ মুন্দর কমনীয় চেহারা। বিমল বল্লে–গুড, মনিং স্যার । বৃদ্ধের মুখ দেখে মনে হয় জগতে তার আপন-পর কেউ নেই। তিনি সবাইর ওপর সস্তুষ্ট, জীবনে সবাইকে ভালবেসেছেন। তিনি হাসিমুখে ইংরিজিতে বল্পেন—গুড মনিং, আপনারা কোথায় যাবেন। বিমল বল্পে -সাংহাই। আপনারা কি অনেকদূর যাবেন ? —আমরাও যাচ্ছি সাংহাই । আমি এখানকার কলেজের প্রোফেসর। আমার নাম লি । আমি সেখানে যাচ্ছি যুদ্ধের সময়কার মনস্তত্ব অধ্যয়ন করতে। এদেরও নিয়ে যাচ্ছি, এর সবাই আমার ছাত্র। সদানন্দ বৃদ্ধ কথা শেষ করে গব্বিত দৃষ্টিতে তার এগারোটি তরুণ ছাত্রের দিকে চাইলেন। বিমল ও স্বরেশ্বরের বড় অদ্ভূত মনে হোল । এই ভয়ানক দিনে ইনি মনস্তত্ব অধ্যয়ন করতে চলেছেন সাংহাইতে, এতগুলি বালকের জীবন বিপন্ন করে। একটু পরে বৃদ্ধের একটি ছাত্র একটি বেতের বাক্স থেকে কি সব খাবার বার করে সবাইকে খেতে দিলে। বৃদ্ধ সুরেশ্বর ও বিমলকেও তাদের সঙ্গে খেতে আহবান করলেন। স্বরেশ্বর নিম্নস্বরে বল্লে—খেও না বিমল। ইদুর ভাজা কিম্বা আরম্বলা-চচ্চড়ি বোধ হয়। কিন্তু সে সব কিছু নয়। শরবতী লেবুর রস দেওয়া কুমড়োর বীচি ভাজা আর শসার আচার । বিমল বল্লে, ‘প্রোফেসর লি, আপনি সাংহাইতে কোথায় উঠবেন ? আমাদের সঙ্গে থাকুন না, আমরা যেখানে থাকবে ? হঠাৎ এরোপ্লেনের আওয়াজ কানে গেল-গাড়ীম্বুদ্ধ সবাই সন্ত্রস্ত হয়ে জানলার কাছে গিয়ে আকাশের দিকে চোখ তুলে দেখবার চেষ্টা করলে কোন দিক থেকে আওয়াজটা আসছে। ছ’খানা এরোপ্লেন সারবন্দী হয়ে উড়ে পূব থেকে পশ্চিমের দিকে আসছে। ট্রেনখানার
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১১৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।