পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

% ბ &:) বিভূতি-রচনাবলী না—সামনের দিকে লাইনের ওপর আর একখানা ট্রেন যেন দাড়িয়ে--কুয়াশায় তার পেছনের গাড়ীর লাল আলো ক্ষীণভাবে জলছে। প্রোফেসর লি-ও ইতিমধ্যে উঠেছেন। তিনি বল্লেন—ব্যাপারটা কি ? বিমল বল্লে—সামনে দুখান ট্রেন দাড়িয়ে—এই তো দেখছি। ঘোর কুয়াশা, বিশেষ কিছু দেখা যায় না। ট্রেন থেকে লোকজন নেমে দেখতে গেল সামনের দিকে এগিয়ে । খুব একটা গোলমাল যেন শোনা যাচ্ছে সামনে । to স্বরেশ্বরও উঠেছিল, বল্লে—চলো বিমল, এগিয়ে দেখে আসি । প্রোফেসর লি-ও নামলেন ওদের সঙ্গে। দুখানা ট্রেনকে ঘন কুয়াশার মধ্যে অতিক্রম করে রেললাইনের সামনে গিয়ে যে দৃশ্ব চোখে পড়লো তা যেমন বীভৎস, তেমনি করুণ। সেখানে আর একখানা ছোট সৈন্যবাহী ট্রেন দাড়িয়ে–কিন্তু বর্তমানে সেখানাকে ট্রেন বলে চিনে নেওয়ার উপায় নেই বল্লেই হয়। ছাদ উড়ে গিয়েছে, মোটা মোট লোহার দণ্ড বেঁকে দুমড়ে লাইনের পাশের খাদে ছিটকে পড়েছে—জানলা-দরজার চিহ্ন বড় একটা নেই। কেবল ইঞ্জিনের কিছু হয় নি। শোনা গেল ট্রেনখানার ওপর বোমা পড়েছে এই কিছুক্ষণ আগে—কিন্তু মুখের বিষয় গাড়ীখানা একদম খালি যাচ্ছিল। এখান কোনো টাইমটেবলভুক্ত যাত্রী বা সৈন্যবাহী ট্রেন নয়। খালি ট্রেনথান ফু-চু থেকে সাংহাই যাচ্ছিল, ডাউন লাইনে বড় গাড়ীর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে এর কামরাগুলো এই উদ্দেশ্যে। গার্ড ও ড্রাইভার বেঁচে গিয়েছে। কোনো প্রাণহানি হয় নি । লাইন পরিষ্কার করতে বেলা এগারোটা বেজে গেল। মাত্র পনেরো মাইল দূরে সাংহাই, সেখানে পৌছুতে বেজে গেল একটা । সাংহাই নেমে বিমল ও সুরেশ্বর বুঝলে এ অতি বৃহৎ শহর ; সাংহাইএর রাস্তাঘাট খুব চওড়া ও আধুনিক ধরনে তৈরী, বড় বড় বাড়ী, দোকান, হোটেল, আপিস, স্কুল, কলেজ— চীন ও ইংরাজী ভাষায় নানা সাইনবোর্ড চারিদিকে, মোটরের ও রিকশা-গাড়ীর ভিড়, রাস্তাঘাট লোকে লোকারণ্য, চায়ের দোকান, চীনা ভাতের দোকানে ছোট বড় ইদুর ভাজা ঝোলানো রয়েছে, ফলওয়ালী রাস্তার ধারে বসে ফল বিক্রী করছে—এত বড় শহরের লোকজন ও ব্যবসাবাণিজ্য দেখলে কেউ বলতে পারবে না যে এই সাংহাই শহরের ওপর বর্তমানে জাপানী সৈন্যবাহিনী আক্রমণ করতে আসছে পিকিং থেকে। কিছু বদলায় নি যেন, মনে হয় প্রতিদিনের জীবনযাত্রা সহজ ও উদ্বেগশূন্য ভাবেই চলেছে । এখানে প্রোফেসর লি ওদের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। খুব বড় ধূসর রংয়ের সামরিক লরীতে চড়ে ওরা একটা বড় লম্বামতো বাড়ীর সামনে নীত হোল । বাড়ীটা সামরিক বিভাগের একটা বড় দপ্তরখানা, এ ওদের বুঝতে দেরি হোল না—