পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

lo/o প্রসঙ্গে এ কথাও মনে হয় যে গদ্যে লিখিত কয়েক শ্রেণীর রচনা আছে, ষে-গুলি কাব্য-ধর্মী ; তাদের আদরও সহজে ফুরোয় না। উত্তম রস-রচনা, ভ্রমণ-কাহিনী, দিন-পঞ্জিকা ও শ্রেষ্ঠ শিশুসাহিত্য এই পর্যায়ে পড়ে । তবে কথাটা শুধু সেরা লেখার বেলাতেই খাটে। শ্রবুদ্ধদেব বস্ব অযোগ্য লেখার প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “কালের নির্মম সম্মার্জনী” তাদের ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়। ছোটদের বইয়ের বেলাতেও তাই। শুধু শ্রেষ্ঠগুলিই টিকে থাকবে। “চাদের পাহাড়" এমনি একটি বই। শুধু এই সংগ্রহেই নয়, বিশ্বের শিশু-সাহিত্যের যে-কোনো দরবারে এ রচনা সম্মান পেতে পারে। নানান দিক দিয়ে অসাধারণ মনে হয় এই বইটিকে । শেষের দিকে একটি প্রাচীন চৈনিক প্রবাদ উদ্ধৃত আছে, তার মধ্যে দুনিয়ার দুঃসাহসিক অভিযাত্রীদের মনের কথার সারমর্ম বিধুত— “ছাদের আলসের চৌরস একখানা টালি হয়ে অনড় অবস্থায় মুখে-স্বচ্ছন্দে থাকার চেয়ে, স্ফটিক পাথর হয়ে ভেঙে যাওয়া অনেক ভালো, অনেক ভালো, অনেক ভালো ।” শ্ৰীগোপাল হালদারের উক্তিতে বিভূতিভূষণের সাহিত্য, পরিচয়ের মূল স্বত্রগুলির মধ্যে অস্তমুখিতাকে একটি বলে নির্দেশ করা হয়েছে। তার ছোটদের জন্য লেখা বইগুলি সম্পর্কে এটা সত্য নয়। আসলে শিশু সাহিত্য আদৌ অস্তমুখী নয় এবং হতেও পারে না। শিশুসাহিত্যের গতিই হল বাইরের দিকে, বিশেষ করে রহস্য ও দুঃসাহসিক অভিযানের গল্পে । হয়তো উক্ত সমালোচক বিভূতিভূষণের রচিত ছোটদের গল্প পডেন নি। কিম্ব আরো শত শত বঙ্গীয় সাহিত্যরসিকদের মতো সেগুলি পড়েছেন বটে, কিন্তু তাদের তিনি স্থায়ী সাহিত্যের মর্যাদা দিতে চান না। তার পরবর্তী মন্তব্য থেকে সেই রকমই মনে হয়। তিনি লিখেছেন, “ঘটনার ঘনঘটা বিভূতিভূষণের কোনো উপন্যাসে বিশেষ নেই।” আমরা তো দেখি তার লেখা ছোটদের গল্পগুলি ঘটনার উর্মিমালার শিখরদেশের ফেনপুঞ্জের মতো বিপুল জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে অট্টহাস্ত করতে করতে একেবারে পাঠকের হৃদয়ের তটে এসে আছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে আরো মনে হয় ছোটদের বই হবে জাপানী বাগানের মতো। শিল্পী সেখানে একটি বাড়তি পাত, বা বেঁটা বা ফুল রাখেন না। কেটেছেটে সব বাদ দিয়ে, শুধু সৌন্দর্যের অস্তরের অন্ত:করণকে রক্ষা করার জন্য যেটুকু না হলেই নয়, কেবলমাত্র তাকেই রাখেন। তখন যদি দৈবাৎ বাতাস লেগে একটি পাতা বা কুঁড়ি বা ফুল খসে পড়ে যায়, বাকি সবটা তার জন্ত হাহাকার করতে থাকবে। ছোটদের জন্য লেখার বেলাও তাই হবে। এতটুকু বাহুল্য থাকবে না। শুধু কাহিনীর এগিয়ে চলার জন্য, পরিস্থিতি প্রস্ফুটিত করার জন্য, স্বন্দরকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, রসকে ঘনীভূত করার জন্য যতটুকু দরকার, তাই থাকবে। বড় বেশি প্ৰগল্‌ভত ছোটদের গল্পে জায়গা পাবে न1 ।। নিজের থেকেই এ-সব কথা বিভূতিভূষণের জানা ছিল। তার গল্পের আরম্ভের শৈলীই বা