মরণের ডঙ্কা বাজে ১০৯ সে যেচে আলাপ করলে। যেমনি স্বত্র তেমনি অদ্ভূত ধরণের প্রাণবস্তু, সজীব মেয়ে। কুড়ি একুশ বয়েস–চোখেমুখে বুদ্ধির কি দীপ্তি ! বিমল তাকে বল্লে—মিস্ হুইটবার্ন, তুমি কি ডাক্তারীর ছাত্র ছিলে ? মেয়েটি বল্লে—না। আমি নাস হবে। আস্তজাতিক রেডক্রসে কিংবা চীনা সামরিক বিভাগের হাসপাতালে। —তোমার বাপ-মা আছেন ? —আছেন। আমার বাবা ঘোড়ার শিক্ষক। খুব নাম-করা লোক আমাদের কাউটিতে । - —র্তারা তোমাকে ছেড়ে দিলেন ? —র্তাদের বুঝিয়ে বল্লাম। জগতের এক হতভাগা জাতি যখন এত দুৰ্দ্দশা ভোগ করছে, তখন পড়াশুনো বা বিলাসিত কি ভাল লাগে ? আমি আমার সেণ্ট আর পাউডারের টাকা জমিয়ে, টকির পয়সা জমিয়ে, পাঠিয়ে দিয়েছিলাম এদের সাহায্যের জন্যে মার্কিন রেড ক্রস ফণ্ডে। তারপর নিজেই না এসে পারলুম না—তুমিই বলে না মিঃ বোস, পারা যায় থাকতে ? বিমল মুগ্ধ হয়ে গেল এই বিদেশিনী বালিকার হৃদয়ের উদারতার পরিচয় পেয়ে। স্বাধীন দেশের মেয়ে বটে ! সংস্কারের পুটুলি নয়। মেয়েট বল্লে—আমাকে এ্যালিস বলে ডেকে। একসঙ্গে কাজ করবো, অত আড়ষ্ট ভদ্রতার দরকার নেই। আমার একখানা ফটাে দেবো তোমায়, চলো তুলিয়ে আনি দোকান থেকে । কনসেশনের মধ্যে প্রায়ই সব আমেরিকান দোকান। মেয়েটি বল্লে—চলে সাংহাই শহরের মধ্যে একটু বেড়িয়ে আসি—কোনো চীনা দোকানে ফটো তুলবো। ওরা দু পয়সা পাবে। অনুমতি নিয়ে আসতে আধঘণ্টা কেটে গেল, তারপর বিমল আর এ্যালিস কনসেশনের বড় ফটক দিয়ে সাংহাইয়ে যাবার রাস্তার ওপর উঠে একখানা রিকৃশ ভাড়া করলে । কনসেশনে রাস্তাঘাটের নাম ইংরাজীতে ও ফরাসী ভাষায়। সাংহাই শহরে চীনা ভাষায়। কিছু বোঝা যায় না। ঢলঢলে নীল ইজের ও স্ট্র হ্যাট পরে চীনা রিকৃশাওয়াল রিকৃশ টানছে, কিন্তু এ অংশেও বহু বিদেশী লোক ও বিদেশী দোকান-পসারের সারি। সাংহাইএর আসল চীনাপল্লী আলাদা—রাস্তা সেখানে আরও সরু সরু—একথা বিমল ইতিমধ্যে চীনা অফিসারদের মুখে শুনেছিল। এ্যালিস্ বল্লে—চল, চীনাপাড়া দেখে আসি, মিঃ বোস্। রিকৃশাওয়ালাকে চীনাপাড়ার কথা বলতেই সে বারণ করলে। বল্লে—সেখানে কেন যাবে ? এ সময় সে সব জায়গা ভালো নয়। বিপদে পড়তে পারো। তোমাদের সেখানে নিয়ে গেলে আমায় পুলিসে ধরবে। এ্যালিস্ ভয় পাবার মেয়েই নয়। বঙ্গে—চল, মিঃ বোল, আমরা হেঁটেই ৰাবো। ওকে বিপদে ফেলতে চাই নে। ওর ভাড়া মিটিয়ে দিই।
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১২২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।