মরণের ডঙ্কা বাজে Ꮌ Ꮌ Ꮔ হোল জাপানীদের বিখ্যাত বোমা ফেলবার প্লেন কাওয়াসাকি বম্বার। কিন্তু কনশেসনে বোমা ! এরকম তো কখনো— সে রাত্রে আর কারে ঘুম হোল না। বিমল খুব খুশী না হয়ে পারলে না, তার মঙ্গলমঙ্গলের দিকে এ্যালিসের এত আগ্রহদৃষ্টি দেখে। সেই রাত্রে বোমা পড়েছে শুনে এ্যালিস্ সকলের আগে এসেছে তাকে দেখতে, সে কেমন আছে ! শেষ রাত্রের দিকে সবাই একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল কিন্তু শোরগোলে ওদের ঘুম ভেঙে গেল । ভীষণ গোলাবর্ষণের শবা আসছে—সাংহাই শহরে জাপানী যুদ্ধজাহাজ ও এরোপ্লেন থেকে একযোগে গোলা ও বোমা বৃষ্টি হচ্ছে । সঙ্গে সঙ্গে সাংহাই শহর থেকে দলে দলে স্ত্রী-পুরুষ ছেলেমেয়ে পালিয়ে আসছে কনশেসনে —বাক্স তোরঙ্গ, পোটলা পু টুলি নিয়ে, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের হাত ধরে। এদের সবারই মুখে ভীষণ ভয়ের চিহ্ন—এদের চক্ষু উদ্বেগে ও রাত্রি জাগরণে রক্তবর্ণ, চুল রুক্ষ , পাশব বলের কাছে মানুষের কি শোচনীয় পরাজয় ! বেলা দশটার মধ্যে ব্রিটিশ কনশেসনের হাসপাতাল ও মার্কিন রেডক্রশের বড় হাসপাতাল আহতের ভিড়ে পরিপূর্ণ হয়ে গেল । কি ভীষণ আওয়াজ ও গোলমাল পেনস্থ প্রাচীরের দিকে, সমুদ্রের থেকে মাইল দুই দূরে পূর্ব কোণে। সেখানে চীনা টেম্ব-কুট, আমির সঙ্গে জাপানী নেী-সৈন্যদের যুদ্ধ চলছে। কনশেসন থেকে যুদ্ধস্থলের দূরত্ব প্রায় তিন মাইল, বিমল জিজ্ঞেস করে জানলে। এ ছাড়াও গোলাবর্ষণ চলছে শহরের বিভিন্ন স্থানে । টেলিফোনে অর্ডার এল মেডিকেল ইউনিটের বড় ডাক্তারের কাছে থেকে—বিমল, সুরেশ্বর, এ্যালিস ও মিনিকে চ্যাং-লীন এাভিনিউতে চীনা সামরিক হাসপাতালে যাবার জন্যে। ওরা আমেরিকান রেডক্রস মোটরে সামরিক হাসপাতালের দিকে ছুটলো। ড্রাইভার খুব বড় একটা রেডক্রশ পতাকা গাড়ীর বনেটে উড়িয়ে দিলে—এ ছাড়া গাড়ীর ছাদের বাইরের পিঠে সারা ছাদ জুড়ে একটা প্রকাণ্ড লাল ক্রস অ্যাকা। এত সাবধানতা সত্ত্বেও ড্রাইভার বল্পে—যদি আপনার হাসপাতালে পৌছতে পারেন, সে খুব জোর-বরাত বুঝতে হবে আপনাদের । স্বরেশ্বর ও বিমল একযোগে বল্পে কেন ? – কনশেসন বা রেডক্রস কিছুই মানছে না। জাপানী বোমারু প্লেন কালও আমাদের রেডক্রস ভ্যানে বোমা ফেলেছে—শোনেন নি আপনারা সে কথা ? সেকথা না শোনাই ভাল। ওদের মোটর কন্শেসন থেকে বার হয়ে খানিকটা ফাক মাঠ দিয়ে তীর বেগে ছুটলো। বিমল দেখলে ড্রাইভার মাঝে মাঝে উপরের দিকে উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে চেয়ে কি দেখছে। বিমল বল্লে—কি দেখছো ? বি. র. ৯–৮
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৩০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।