মরণের ডঙ্কা বাজে > うお বালকটিকে টেবিলে নিয়ে গিয়ে তোলা হয়েচে, কতকগুলি ডাক্তারী ছাত্র কিছুদূরে একটা গ্যালারিতে বসে আছে, হাসপাতালের সহকারী সার্জন চীনামান, তিনি ছাত্রদের দিকে চেয়ে কি বলছেন আর একজন ছাত্র ক্লোরোফর্ম পাম্প করছে। বিমল ও এ্যালিস্ সার্জনকে সাহায্য করবার জন্যে তৈরী হয়ে আছে। সার্জন হেসে বললেন, সকাল থেকে অপারেশন টেবিলে মরেছে একুশট, টেবিল থেকে নামাবার তর সয় নি—গরম জলট সরিয়ে দাও নার্স— এমন সময় মাথার ওপরে কোথায় এরোপ্লেনের শব্দ শোনা গেল । বাইরে যারা ছিল, তারা দৌড়ে ভেতরে এল, একটা ছুটোছুটি শুরু হোল চারিদিকে। কে একজন বল্লে—জাপানী বম্বার । এ্যালিস বল্লে—রেডক্রসের লাল আলো জলছে বাইরে—হাসপাতাল বলে বুঝতে পারবে— সার্জন হেসে বল্লে-নার্স, ওরা কি কিছু মানছে ?—শক্ত করে ধরে থাকে৷ তুলোটীবালক অজ্ঞান হযে পড়েছে। সার্জন ক্ষিপ্র ও কৌশলী হাতে ছুরি চালাচ্ছেন। বিমল নাড়ী ধরে অাছে। বুম্মম্ম ম!—বিকট বিস্ফোরণের শব্দ কোথাও কাছেই। তুমুল গোলমাল হৈ-চৈ, আৰ্ত্তনাদ, হাসপাতালের বা দিকের অংশে বোমা পড়েছে। উগ্ৰ ধোয়া ও নাইট্রোগ্লিসিরিনের গন্ধে ঘর ভরে গেল। সার্জন, বিমল বা এ্যালিসের দৃষ্টি কোনোদিকে নেই– ওরা একমনে কাজ করছে। সার্জন দৃঢ় অবিকম্পিত হস্তে ছুরি চালিয়ে যাচ্ছেন, যেন তার অপারেশন টেবিলের থেকে এক শো গজের মধ্যে প্রলয়কাগু ঘটে নি, যেন তিনি মোটা ফি নিয়ে বড়লোক, রোগীর বাড়ী গিয়ে নিজের নৈপুণ্য দেখাতে ব্যস্ত ; গরম জলের পাত্রে ডোবানো ছুরি, ফরসেপ ছুচ ক্ষিপ্ৰহস্তে একমনে সার্জনকে যুগিয়ে চলেছে এ্যালিস, একমনে ব্যাণ্ডেজের সারি গুছিয়ে রাখছে, পাতলা লিণ্ট-কাপড়ে মলম মাখাচ্ছে । বিমল নাড়ী ধরে আছে। বাইরে বিকট শব্দ-হুড়মুড় করে হাসপাতালের বা দিকের উইং-এর ছাদ ভেঙে পড়লো। মহাপ্রলয় চলেছে সেদিকে— সার্জন বল্লেন—নাড়ীর বেগ কত ? বিমল—সত্তর । কে একজন ছুটতে ছুটতে এসে বল্লে—স্তার, বাদিকের উইং গুড়ো হয়ে গোট সেপটিক ওয়ার্ডের রোগী চাপা পড়েছে—এদিকেও বোমা পড়তে পারে—তিনখানা বস্বার— সার্জন বল্লেন—পড়লে উপায় কি ? নার্স বড় ফরসেপটা— উগ্ৰ ধোয়ায় সবারই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে! আর একটা শব্দ অন্য কোনদিকে হোল —অার একটা বোমা পড়েছে—বেজায় ধোয়া আসছে ঘরে । বিমল বল্লে—স্তার, ধোয়ায় রোগী দম বন্ধ হয়ে মারা বাবে যে ? ক্লোরোফর্মের রোগী, এ ভাবে কতক্ষণ রাখা যাবে ?
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৩২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।