মরণের ডঙ্কা বাজে ১২১ একটা শামিয়ানার নীচে ওরা চ খেতে বসলো । দোকানের মালিক একজন রোগা চেহারার চীনা স্ত্রীলোক। সে এসে পিজিন ইংলিশে বল্লে—কি দেবো ? * বিমল বল্লে—খাবার কি আছে ? —ভাজা মাছ, রুটি, মাখন আর ব্যাঙের— —থাকৃ থাকৃ, রুটি মাখন ভাজা মাছ নিয়ে এসো— রুটি-মাখন অন্যত্র চীনা দোকানে পাওয়া যায় না ; তবে চ্যাং সে লীন এ্যাভিনিউর দোকানগুলো কিছু শৌখিন ও বিদেশী-ঘেষা। ধূমায়িত চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে বিমল একটা আরামের নিঃশ্বাস ফেললে। স্বরেশ্বর তো গোগ্রাসে রুটি ও মাখনের সদ্ব্যবহার করতে লাগলো, খানিকক্ষণ কারো মুখে কথা নেই। মিনি বল্লে—একটা গল্প বলি শোনো সবাই। আমি তখন স্কুলে পড়ি, মেণ্টোনে, কালিফোণিয়ায়। আমার বাবা আমায় একটা চিনচিলা কিনে দিয়েছিলেন— সুরেশ্বর বল্লে—সে কি ? মিনি হেসে বল্লে—জানো না? একরকম ছোট কাঠবিড়ালির চেয়ে একটু বড় জানোয়ার, খুব চমৎকার লোম গায়ে—লোমের জন্যে ওদের শিকার করা হয়। তারপর আমার সেই পোষা চিনচিলাটা— বুৰ্ম্ম-মৃ–ম!—বিকট আওয়াজ ! সবাই চম্কে উঠলো। তিনখানা বাড়ীর পরে একটা বাড়ীর ওপরে জাপানী বম্বার ঘুরছে দেখা গেল—কিন্তু ধোয়া উড়ছে বাড়ীটার সামনের রাস্তা থেকে। লোকজন দেখতে দেখতে যে যেখানে পারলে আড়ালে ঢুকে পড়লো। একটু পরে একখানা রিকৃশ টেনে দুজন লোককে সেদিক থেকে ওদের দোকানের সামনে দিয়ে যেতে দেখা গেল রিকৃশায় আধশোয় আধবসা অবস্থায় একটা রক্তাক্ত মৃতদেহ । তার মুখটা থেংলে রক্ত গড়িয়ে বুকের সামনে জামাট রাঙিয়ে দিয়েছে। শামিয়ানার নীচে আরও তিনটি চীনা খদের বসে চ। খাচ্ছিল। তারা উত্তেজিত ভাবে চীনা ভাষায় দোকানীকে কি বল্পে। দোকানীও তার কি জবাব দিলে, তারপরে ওদের মধ্যে একজন একটা সিগারেট ধরালে । জাপানী বোমারু প্লেন ঘর ঘর শব্দ করে যেন ওদের মাথার ওপরে ঘুরছে। বিমল একবার চেয়ে দেখলে। না, একটু দূরে বঁাদিকে। ঠিক মাথার ওপরে নয়। মিনি বল্লে—তারপর শোনো, আমার সেই চিনচিলাটা— এ্যালিস্ অধীরভাবে বল্লে—আঃ মিনি, থাক চিনচিলার গল্প। খাও এখন ভাল করে। আমার তো বেজায় ঘুম পাচ্ছে! বিমল, দোকানীকে জিগ্যেস করো না, স্যাণ্ডউইচ রাখে না ? বিমল বল্লে—ব্যাঙের মাংসের স্তাগু উইচ বলছে এ্যালিস্—দিতে বলবো ?
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৩৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।