S૨8 বিভূতি-রচনাবলী বল্লে । তারপর ওরা গল্প ও গুজবে অন্তমনস্ক হয়ে পড়েছে—যখন ওরা আবার রাস্তার দিকে নজর করলে তখন দেখলে রিকশা একটা নির্জন জায়গা দিয়ে যাচ্ছে। দুধারে দরিদ্র লোকেদের কাচা মাটির খাপরা-ছাওয়া ঘর। রাস্ত জনশূন্ত—দূরে দূরে খোলা মাঠের মধ্যে কি যেন মাঝে মাঝে জলে উঠছে। বিমল বল্লে—এ কোথায় নিয়ে এসে ফেল্পে হে ? সুরেশ্বর পিজিন ইংলিশে একজন রিকশাওয়ালাকে বল্লে—কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস্ রে ? এ পথ তো নয় ? রিকশাওয়ালা কোনো উত্তর না দিয়েই জোরে ছুটতে লাগলো। বিমলের মনে সন্দেহ হলো। সে বল্পে—এর মনে কোনো বদমাইশি মতলব আছে মনে হচ্ছে । আমরা তো একেবারে নিরস্ত্র। সঙ্গে মেয়েরা রয়েছে— মিনি ও এ্যালিস্ তখন একটু ভয় পেয়ে গিয়েছে। ওরাও বল্লে—আর গিয়ে দরকার নেই—চীনা গুগু এই সময় দেশ ছেয়ে ফেলেছে। নামে এখানে সব । দুখানা রিকৃশাই পাশাপাশি যাচ্ছিল। এবার মিনিদের রিকৃশাখানা এগিয়ে গেল এবং বিমল কিছু বলবার পূর্বেই রিকৃশাখানা হঠাৎ পথের মোড় ঘুরে পাশের একটা সংকীর্ণ গলির মধ্যে ঢুকে পড়লো ! বিমলদের রিকৃশাখান| কিন্তু তখন সোজা রাস্ত বেয়েই দ্রুত চলেছে। বিমলের ও সুরেশ্বরের চীৎকার সে আদৌ কর্ণপাত করলে না । বিমল লাফ দিয়ে রিকৃশাওয়ালার ঘাড়ে পড়লো রিকৃশ থেকে। রিকৃশাখানা উন্টে গেল সঙ্গে সঙ্গে । সুরেশ্বর রিকৃশার সঙ্গে চিৎপাত হয়ে পড়ে গেল। রিকৃশাওয়ালাট। সেখানে বসে পড়লো—ওর ওপর বিমল ! রিকৃশাওয়ালাট একটু পরেই গা ঝেড়ে উঠে, চীনা ভাষায় কি একটা দুৰ্ব্বোধ্য কথা বলে উঠে, ওদের দিকে এগিয়ে এল। বিমল চেচিয়ে বলে উঠলো—সুরেশ্বর, সাবধান ! রিকৃশাওয়ালার হাতে একখানা বড় চকৃচকে ছোরা দেখা গেল। সুরেশ্বর পিছন থেকে তাকে জোরে এক ধাক্কা লাগালে। সে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লে। আবার বিমলেরই উপর। বিমলের সঙ্গে তার ভীষণ ধন্তাধস্তি শুরু হোল। বিমলের ੁਆਿਣ শরীরচর্চা করা ছিল। মিনিট পাচ-ছয়ের মধ্যে রিকৃশাওয়ালাকে মাটিতে ফেলে, বিমল তার হাত মুচড়ে ছোরাখান টান দিয়ে ফেলে বল্লে—ওখানা তুলে নাও স্বরেশ্বর— তারপর এই বদমাইশটার গলায় বসিগে দাও— ছোর হাত থেকে খসে যাওয়াতে বাইশটা নিরুৎসাহ ও ভীত হয়ে পড়লো—এইবার ছোরা বসানোর কথা শুনে, সে বিমলের কাছ থেকে নিজেকে ছিনিয়ে নিয়ে উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুট দিলে। সব ব্যাপারটা ঘটে গেল পাচ-ছ’মিনিটের মধ্যে। বিমল ঝেড়ে উঠে একটু দম নিয়ে বল্লে—সুরেশ্বর, মেয়েদের গাড়ীখান !
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৩৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।