মরণের ডঙ্কা বাজে Sરહ তারপর ওরা দুজনেই ছুটলো সেই গলিটার দিকে—যেটাব মধ্যে মিনিজের রিকৃশাখানা ঢুকেছে। গলিটা নিতান্ত নোংরা, দুধারে কাচ টালির ছাদওয়ালা নীচু নীচু বাড়ী—কিছু দূরে একটা সাধারণ স্বানাগার—এখানে নীচশ্রেণীর মেয়ে পুরুষে সাধারণতঃ স্নান করে ন-- করলেও রাত্রে করে। স্নানাগারের সামনে দু-জন চীনেম্যান দাড়িয়ে আছে দেখে, বিমল তাদের পিজিন ইংলিশে জিজ্ঞেস করলে—একখানা রিকৃশ কোন দিকে গেল দেখেছ ? তাদের মধ্যে একজন বল্লে—ওই বাড়ীটার সামনে একখানা রিকৃশা দাড়িয়েছিল একটু আগে । বিমল ও স্বরেশ্বর বাড়ীটার সামনে গিয়ে দাড়ালে। ডাকাডাকি করেও কারো সাড় পাওয়া গেল না। তখন বিমল বল্লে—চল বাড়ীর মধ্যে ঢুকি— ঘরটায় ঢুকেই ওদের মনে হোল, এটা একটা চতুর আড্ডা। ঘরের মধ্যে চার-পাঁচটা চীনাবাশের চেয়ার, একদিকে একটি নীচু বাশের তক্তপোশ। চণ্ডু খাবার লম্বা নল, ছিটেগুলি গালার বড় পাত্রে, চণ্ডুর আড্ডার সব জিনিসই মজুদ। দেওয়ালে চীনা দেবতার ভীষণ প্রতিকৃতি। ঘরটি লোকশূন্য, নির্জন। এ ধরণের চতুর আড়া ওরা সিঙ্গাপুরে দেখেছে। কিন্তু বাড়ীর লোকজন কোথায় ? বিমল ও স্বরেশ্বর বাড়ীটার মধ্যে ঢুকে গেল। একটা বড় ঘরের মধ্যে অনেকগুলো লোক বসে মা জং খেলছে। বিমল বুঝতে পারলে, জায়গাটা শুধু চণ্ডু নয়, নীচ শ্রেণীর জুয়াড়ীদের আড়াও বটে। ওদের দেখে দুজন লোক উঠে দাড়ালো! ওদের মধ্যে একজন কর্কশ কণ্ঠে পিজিন ইংলিশে বল্লে—কি চাই ? কে তোমরা ? বিমলের মাথায় চট করে এক বুদ্ধি খেলে গেল। সে কর্তৃত্বের গ্রামভারী চালে বল্লে, আমরা ব্রিটিশ কনশেসনের পুলিশের লোক। আমাদের সঙ্গে দশজন কনস্টেবল গলির মোড়ে অপেক্ষা করছে। আমাদের সঙ্গে বন্দুক ও রিভলবার আছে। দুজন মেমসাহেবকে এই আড্ডায় গুম্ করা হয়েছে—বার করে দাও, নইলে আমরা জোর করে ভেতরে ঢুকে সন্ধান করবো। দরকার হলে গুলি চালাবো । এবার একজন প্রৌঢ় লম্বা ধরণের লোক এক কোণ থেকে বলে উঠলো—আমরা কন্শেসন পুলিশ মানি নে—সাংহাইয়ের পুলিশ মার্শালের সই করা ওয়ারেন্ট দেখাও— বিমল বল্লে—তুমি জানো এটা যুদ্ধের সময়! আমরা জোর করে ঢুকবে এবং দরকার হোলে এই মা জংএর জুয়ার আড়ডার প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে সাংহাই পুলিশের হাতে দেবেী—এর জন্তে যদি কোন কৈফিয়ৎ দিতে হয় পুলিস মার্শালের কাছে আমরা দেবেী— তুমি মেমসাহেবদের বার করে দেবে কিনা বলো— লোকটা বল্লে—কোন মেমসাহেবের কথা বলছো ? মেমসাহেবের সঙ্গে আমাদের সম্বন্ধ কি ? আমি ভাবছিলাম, তুমি জুয়া আর চণ্ডুর আড্ডা হিসেবে বাড়ী সার্চ করবে বলছো। বিমল বল্লে—বেশি কথায় সময় নষ্ট করতে চাইনে—তাহোলে আমাদের জোর করতে হোলো—স্বরেশ্বর কন্স্টেবলদের ডাকো— হঠাৎ চীৎকার করে সে বলে উঠলে—মাথা নীচু করে বসে পড়—বসে পড় স্বরেশ।
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৩৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।