૭૨૭ বিভূতি-রচনাবলী সী করে একটা শব্দ হোল এবং ঝকৃঝকে কি একটা জিনিস ওদের চোখের সামনে এক ঝলক খেলে গেল—ওরা তখন দুজনেই বসে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ওদের পেছন দেওয়ালে একটা ভারী জিনিস ঠক্ করে লাগবার শব্দ হোল । স্বরেশ্বর পিছন ফিরে চকিতে চেয়ে দেখলে—একখানা বাকা ধারালে চকৃচকে চীনেছোর, ছুড়ে-মারা ছোরা, ছুড়ে মারবার জন্যেই এগুলি ব্যবহৃত হয়—ছোরাখানা সবেগে দেওয়ালে প্রতিহত হয়ে, আধখানা ফলামৃদ্ধ দেওয়ালের গায়ে গেথে গিয়েছে। স্বরেশ্বর শিউরে উঠলো—ওরই গলা লক্ষ্য করে ছোরাখানা ছোড়া হয়েছিল। ওদের সঙ্গে সত্যিই হাতাহাতি বাধলে বা সবাই একযোগে আক্রমণ করলে, নিরস্ত্র বিমল ও সুরেশের কি দশ হোত বলা যায় না, কিন্তু বিমল মাটি থেকে উঠেই দেখলে ঘরের মধ্যে আর একজন লোকও নেই। পালায় নি—হয়তো বা ওরা লোক ডাকতে গিয়েছে! সুরেশ্বর নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়ে, খানিকট দিশাহার। হয়ে পড়েছিল । বিমল গিয়ে তার হাত ধরে টেনে তুলে বল্লে—সুরেশ্বর, এইবেল উঠে বাড়ীট খুজি এস—এখুনি সব চলে আসতে পারে। একটা ঘর বন্ধ ছিল—বাইরে থেকে তালা দেওয়া। আর সব ঘর খোলা—সেগুলি জনশূন্ত । স্বরেশ্বর ও বিমল দুজনেই একযোগে ঘরের দরজায় লাথি মারতে লাগলে।। —মিনি—মিনি-এ্যালিস্-এ্যালিস্— ঘর থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। বিমল বল্লে—কি ব্যাপার । ঘরের মধ্যে কেউ নেই নাকি ? দুজনের সম্মিলিত লাথির ধাক্কাতেও দরজার কিছুই হোল না । বেজায় মজবুত সেগুন কাঠের দরজা। হঠাৎ বিমলের চোখ পড়লো ঘরের দেওয়ালের ওপরের দিকে। সেখানে একটা ছোট ঘুলঘুলি রয়েছে। কিন্তু অত উচুতে ওঠা এক মহা সমস্ত। বিমল খুজতে খুজতে একটা জলের টব আবিষ্কার করলে। সেটা উপুড় করে পেতে, মা জং খেলার ঘর থেকে বাশের চেয়ার এনে, তার ওপর চাপিয়ে উচু করে, বিমল অতি কষ্টে তার ওপর উঠলো। সার্কাসের খেলোয়াড় না হোলে ওভাবে ওঠা এবং নিজেকে ঠিকমত দাড় করিয়ে রাখা অতীব কঠিন ব্যাপার। স্বরেশ্বর টবট ধরে রইল—বিমল সস্তপণে উঠে ঘুলঘুলির কাছে মুখ নিয়ে গেল। নীচে থেকে স্বরেশ্বর ব্যগ্রভাবে জিজ্ঞেস করলে—কি দেখছ ? কেউ আছে ? — ঘোর অন্ধকার—কিছু তো চোখে পড়ছে না। —ওদের পরনে নাসের সাদা পোশাক আছে, অন্ধকারেও তো খানিকট ধরা যাবে— ভাল করে দেখ— বিমল ভাল করে চেয়ে দেখার চেষ্টা করে বলে—উ হু, কিছুই তো তেমন দেখছিনে— সাদা তো কিছুই নেই—সব কালোয় কালো । আমার মনে হচ্ছে ঘরটায় কিছুই নেই— —উপায় ?
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৩৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।