পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একজন নিঃসঙ্গ নিরুপদ্রব বুদ্ধ রাতে খুন হয়েছেন । লোকে বলত নাকি বেজায় কঙ্কুষ । রান্নাঘরের মেজে খোড়া । চারদিকে সন্দেহের জাল নামল। দুঃখের বিষয় জালটি গোড়া থেকেই ছেড়া ছিল। খুনের উদ্দেশু, টাকা লুকোবার জায়গা, সাম্পেকূটদের মধ্যে কে বেশি সন্দেহজনক সব-ই বড় বেশি প্রকট । - কাজেই ডিটেকটিভ গল্পের প্রাণরস সেই সাসপেন্স, সেটিই জমতে পারে নি। সেই দিক দিয়ে পাঠক হতাশ হলেও, মিসমিদের কবচের ব্যাপারটা রোমাঞ্চময় । পাড়াগার পরিবেশটিও খুব ভালো। গাঙ্গুলীমশায়ের মাছ ধরার প্রস্তুতি বড় মনোহর। গল্পের আরম্ভটিও বেশ, কিন্তু তবু পাকা হাতের ডিটেকটিভ গল্প এ নয়।

  • তালনবমী” হল ছোটদের ছোট গল্পের সংগ্রহ। এই দশটি ছোট গল্পের সবগুলিকে হয়তো বিভূতিভূষণের শ্রেষ্ঠ গল্পের তালিকা-ভুক্ত করা যাবে না, কিন্তু এগুলির বিচিত্র বিষয় ও প্রকাশভঙ্গীর মধ্যে বিভূতিভূষণের বহুমুখী সাহিত্য-প্রতিভা উচ্ছসিত হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে চারটি অলৌকিকের কাহিনী আছে ; তার মধ্যে রঙ্কিনীদেবীর খড়গ—পরিবেশ ও পরিস্থিতি স্বষ্টির দিক থেকে প্রশংসনীয়। মেডেল ও গঙ্গাধরের বিপদও ভৌতিক গল্প। শুধু মশলাভূতের গল্পটি তেমন উৎরোয় নি। অলৌকিকের প্রতি লেখকের আকর্ষণের কথা সবাই জানে।

ছোটদের জন্য লেখা অধিকাংশ রহস্য ও রোমাঞ্চের গল্পের বিষয়-বস্তুই হল খুন, চুরি ; ডাকাতি, ছেলেধরার কারসাজি, গুপ্তধন, অসাধ্য-সাধন ইত্যাদি। এ সবের মধ্যে আকস্মিকের অবদান অনেকখানি। “বামা" গল্পে একজন ফাস্কড়ে তার শিকারকে ভুলিয়ে এনে বাড়ীতে তুললেও, তার দয়াময়ী বৌমার স্ববুদ্ধির জন্য কাজ হাসিল করতে পারল না। বামাচরণের কাহিনীর বিষয় সেই চির-নূতন গুপ্তধন । এই বইয়ের বাকি চারটির মধ্যে তিনটি গল্প ; “তালনবমী” “চাউল” ও “অরণ্যে” অপূর্ব ও অদ্বিতীয়। তালনবমী হল পাড়াগায়ের গরীব ছেলের সাত পুরুষের জমানো থিদের গল্প। "চাউল”ও সেই জাতের-ই গল্প, তবে এতে ট্র্যাজেডির ভূমিকা বড়। পাথর ফাটাবার জন্য ডিনামাইট ব্যবহারের ফলে দরিদ্র শিশুর একমাত্র সহায় তার বাপের গুরুতরভাবে জখম হয়ে হাসপাতালে যাওয়া, তার স্মৃতি-কথায় বর্ণিত বিভূতিভূষণের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ছায়াপাতে বেদনায় বিধুর। “অরণ্যে” গল্প সার্থক সাহিত্য স্বাক্ট। স্থান লেখকের প্রিয় বিচরণভূমি গালুডির প্রতিবেশী অঞ্চল। আখ্যান কিছু নেই, রাখা মাইন্সের কাছে ঘোর জঙ্গলে পাহাড়ে নদীর ধারের বিপদ-সস্কুল স্থানে পায়ে হেঁটে ভ্রমণ ৷ পড়ে মনে হয় বিভূতিভূষণের স্মৃতি-রেখা থেকে ভেঙ্গে আনা টুকরো, রসে ভরপুর, ভাবে গম্ভীর। একমাত্র “রাজপুত্র” হল রূপকথা। গ্রন্থের পঞ্চম কাহিনীর নাম শুনে কান মুগ্ধ হয়। “হীরামানিক জলে”। যেমন নাম, তেমনি গল্পও বটে। গ্রামের ছেলের দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প। গ্রামের নাম স্বন্দরপুর ছেলের নাম স্বশীল। এক কালের ধনী পরিবারের গরীব বংশধর। পয়সাকড়ি না থাকলেও হাল-চাল বজায় আছে। বি-এ পাস করেও ছেলেকে বসিয়ে রাখা হয়েছে ; ওদের বাড়ির কেউ নাকি পরের চাকরি করে না। ছেলেটিকে ভালোমানুষ মনে হত । কিন্তু যেই স্বযোগ