১২৮ বিভূতি-রচনাবলী নিজেকে ক্ষমা করবে না। ওদের জন্যে বিমলই দায়ী ! হাসপাতাল থেকে বার হয়ে কন্শেসনে ফেরা উচিত ছিল । প্রায় কুড়ি মিনিট হয়ে গিয়েছে। সুরেশ্বরের দেখা নেই। সে কি কনশেসনে ফিরে গিয়েছে নিজেই খবর দিতে ? বিমল আকাশ পাতাল ভাবছে, এমন সময় এক ব্যাপার ঘটলো। রাস্তার আলো হঠাৎ যেন নিবে গিয়ে চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেল। এ আবার কি কাগু ! মিনিট পাঁচ-ছয় কি দশ পরে বাইরে থেকে কে একজন উত্তেজিত গলায় চীনা ভাষায় কি বললে—কোনো সাড়া না পেয়ে আবার বল্লে। ঠিক যেন কাউকে ডাকছে । বিমল অবাক হয়ে ভাবছে গুণ্ডারা ফিরে এল না কি ! হঠাৎ দুজন চীনা ইউনিফর্মপরা পুলিসম্যান বাড়ীর মধ্যে খানিকটা ঢুকে রাগের ও গালাগালির স্বরে চেচিয়ে কি কথা বলে উঠলো। বিমল ভাবলে সুরেশ্বরের আনীত পুলিসম্যান বাড়ী খুজতে এসেছে। ও এগিয়ে যেতে পুলিসম্যান দুজন একটু আশ্চৰ্য্য হোল। তারপর পিজিন ইংলিশে উত্তেজিত কণ্ঠে মা জং খেলার ঘরের আলোর দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বল্লে— আলো এখুনি নিবোও । আমাদের বঁাশি শুনতে পাওনি ? অালো জেলে রেখেছ কেন ? বিমল হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে বল্লে—আলো জেলে রেখেছি কেন ? — হ্যা, আলো জালিয়ে রেখেছ কেন ? অালো, আলো, লণ্ঠন—যা থেকে আলো বার হয়, অন্ধকার দূর করে সেই আলো— —আমি তো জেলে রাখি নি। এ আমার বাড়ী নয়। চীনা পুলিসম্যান দুজন মুখ চাওয়াচাওয়ি করলে। এ বাড়ীর যে এ লোক নয়, তারা সেকথা আগেই বুঝেছিল। বিমল এভক্ষণে যেন সম্বিং ফিরে পেল । বল্লে—দাড়াও, তোমরা যেও না। প্রথমে বলো আলো নিবিয়ে দেবো কেন ? —মিস্টার, সাংহাই পুলিস-মার্শালের নোটিশ দেখো নি ? রাত এগারটার পরে শহরের সব আলো নিবিয়ে দিতে হবে। ব্ল্যাকৃ-আউট। বোমা ফেলছে জাপানীরা। তোমার কি বাড়ী ? —আমার এ বাড়ী নয়। সব বলছি, আমি কনশেসনের লোক—যুদ্ধের ডাক্তার, ভারতবর্ষ থেকে তোমাদের সাহায্য করতে এসেছি। আমরা চারজনে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এই পথে রিকৃশা করে যাচ্ছিলম—সঙ্গে ছিলেন দুটি মার্কিন মহিলা। রিকৃশাওয়ালা র্তাদের নিয়ে কোথায় পালিয়েছে। আমাদের রিকৃশা অন্যপথে নিয়ে গেলে আমরা এই গলির মধ্যে ঢুকে সন্ধান পাই এই বাড়ীটার সামনে রিকশাটা মেয়েদের নিয়ে দাড়িয়েছিল। আমরা বাড়ীতে ঢুকে দেখি, এট। মা-জং জুয়াড়ীদের ও চণ্ডুর আড্ডা। ওদের সঙ্গে মারামারি হয়ে স্বাওয়ার পরে ওরা কোথায় পালিয়েছে। আমার বন্ধু পুলিস ডাকতে গিয়েছে। তোমরা
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৪১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।