মরণের ডঙ্কা বাজে לסיצ সঙ্গে বিষম বিস্ফোরণের আওয়াজ, ইট টালি ছোটার শব্দ, দেওয়াল পড়ার ছাদ পড়ার শব-মানুষের কলরব, হৈ-চৈ, কান্না, পুলিসের হুইস্ল, মাথার ওপর ঘর্ঘর শব—সবসুদ্ধ মিলিয়ে একটা সুপ্ত দৈত্যপুরীর দৈত্যরা যেন হঠাৎ জেগে উঠে উন্মাদ হয়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছে ! ডেপুটি মার্শাল অর্ডার দিলেন, সব কনস্টেবল একত্র হয়ে গেল। কন্শেসন পুলিসের কৰ্ম্মচারীর সাহায্য করতে চাইলে, হতাহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে। সেই অন্ধকারের মধ্যে টর্চ জেলে অট্টালিকার ভগ্নস্তুপ অনুসন্ধান করে আহত ও চাপা-পড়া মানুষের সন্ধান চলতে লাগলো। কাজ এগোয় না। ভাঙা বাড়ীর ইটের রাশি পদে পদে ওদের বাধা দিতে লাগলো। একটা চীনা মন্দিরের কাছে চারজন লোক মরে পড়ে আছে। দুটি ছোট বাড়ী চুরমার হয়ে সেখানে এমন ভাবে রাস্ত আটকেছে যে, মৃতদেহগুলো টেনে বার করবার উপায়ও রাখে নি। ইটের তুপের ওপর উঠে আবার ওদিক দিয়ে নেমে যেতে হোল—তবে জায়গাট। পার হওয়া সম্ভব হোল । বিমল চেচিয়ে বলে উঠলে—সামনে প্রকাগু বোমার গৰ্ত্ত, সাবধান । সবাই চেয়ে দেখলে আন্দাজ ত্রিশফুট ব্যাসযুক্ত একটা প্রকাণ্ড গহবর থেকে এখনও ধোয় উঠছে—এবং গর্তের ধারে এখনও ছটকানো ধাতুর খোলা-ভাঙা টুকরো পড়ে আছে, বিমল টুকরোটা হাতে তুলে নিয়েই ফেলে দিলে -গরম আগুন! কর্ডাইটের উগ্র গন্ধ জায়গাটায়। ওরা সবাই অবাক হয়ে সেই ভীষণ গৰ্ত্তটার দিকে চেয়ে রইল । এমন সময়ে দেখা গেল, ছ’খানা জাপানী প্লেন সার-বন্দী হয়ে দক্ষিণ দিক থেকে উড়ে আসছে—ওদের মাথার উপর। বোধ হয় ওদের টর্চের আলো দেখেই আসছে। চীনা পুলিসের ডেপুটি মার্শাল হেঁকে বল্লেন—সাবধান— বোমার গৰ্ত্তে লাফ দাও! সবাই বুঝলে এ অবস্থায় ত্রিশফুট ব্যাসযুক্ত এবং আন্দাজ প্রায় পনেরো ফুট গভীর বোমার গৰ্ত্তটাই সব চেয়ে নিরাপদ স্থান, সারা চা-পেই পল্লী অঞ্চলের মধ্যে। ঝুপ ঝাপ, দু সেকেণ্ডের মধ্যে ওপরে আর কেউ নেই –সবাই গৰ্ত্তটার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। বিমলও ওদের সঙ্গে লাফ দিয়েছিল—সঙ্গে সঙ্গে ওর হাটু পর্য্যস্ত পাকে পুতে গেল, গৰ্ত্তটার মধ্যে কাদা আর জল—কাদার সঙ্গে বোমার ভাঙা টুকরো মেশানো—সবাই কোনো রকমে জলকাদার মধ্যে মাথা গুজে রইল ধার ঘেষে—কারণ মাঝখানে থাকলে অনেকখানি নক্ষত্র-খচিত অন্ধকার আকাশ দেখা যায়—তখন আর নিজেকে খুব নিরাপদ বলে মনে হয় না । ওদের মধ্যে একজন আমেরিকান পুলিসম্যান ওদের বোঝাচ্ছিল যে, এ অবস্থায় কোন এরোপ্লেন থেকে বোমা ফেললে ওদের লাগবার কথা নয়-সে নাকি মাঞ্চুকুও রণক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা থেকে জানে—বোমার গৰ্ত্তই সৰ্ব্বাপেক্ষা নিরাপদ স্থান । অার একজন বল্পে—কেন, যদি মেসিনগান চালায় ?
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৪৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।