পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মরণের ডস্ক বাজে ১৩৩ যত হোলো, কাজ ততো হলো না । মেশিনগানের একটা গুলিও বোমার গৰ্ত্তের মধ্যে পড়লো না। দু-তিনবার প্লেনগুলো গৰ্ত্তের দিকে নেমে এলো পুরো দমে, কিন্তু কিছু করতে পারলে না। আওয়াজ, কেবলই আওয়াজ ! ক্রমে প্লেনগুলো সরে গেল গৰ্ত্তের ওপর থেকে, হয়তো দেখে ভাবলে গৰ্ত্তের লোকগুলো সব মরে গিয়েছে। মড়ার ওপর মেশিনগানের দামী গুলি চালিয়ে বৃথা অপব্যয় করা কেন ? ওরা সবাই গৰ্ত্ত থেকে উঠে এল। পরস্পরের দিকে চেয়ে দেখলে, কি অদ্ভূত কাদামাথা চেহারা হয়েছে সকলকার । পুলিশের স্মার্ট ইউনিফর্ম একেবারে কাদায় আর ঘোল। জলে নষ্ট হয়ে ভিজে-কাথা হয়ে গিয়েছে। মাকিন পুলিশম্যানটি গৰ্ত্ত থেকে ঠেলে উঠেই বল্লে—বলি নি তোমাদের, এর মেশিনগান ছুড়ে স্থবিধে করতে পারে না ও এরোপ্লেন থেকে ? স্কুলজ, ব্যাঙ্কস একশো এগারো যদি হোত, তবে দেখতে একটা প্রাণীও আজ বচিতাম না। মিনিট পনেরো কেটে গেল ! বোমারু প্লেনগুলো আকাশের অন্যদিকে চলে গিয়েছে । কি ভীষণ আওয়াজ ! বিমলের মনে পড়লো, এ্যালিস তার নরম সাদা হাত দুটি তুলে কান ঢেকে বস্তো—হোয়াট-এ্যান-অ-ফুল রকেট ! এ্যালিসের সেই ভঙ্গিট, তার মুখের কথা মনে পড়তেই বিমলের বুকের মধ্যে কেমন করে উঠলো। এ্যালিস—মিনি—বেচারী এ্যালিস্ !—কি ভীষণ কাল-রাত্রি আজ ওদের পক্ষে। সাংহাইয়ের এই দুর্যোগের রাত্রির কথা বিমল কি কখনো ভুলবে জীবনে ? কোথায় সে সিঙ্গাপুরে ডাক্তারী করবে বলে বাড়ী থেকে রওনা হোল—অদৃষ্ট তাকে কোথায় কি অবস্থায় নিয়ে এসে ফেলেছে ! হঠাৎ পিনাংএর মন্দিরে সেই নিষ্ঠুর মূৰ্ত্তি চীন রণদেবতার ভ্ৰকুটি-কুটিল মুখ মনে পড়লো ওর —রণদেবতা ওদের তার ফঁাদে ফেলেছেন— একটা প্লেন দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটা বস্তির ওপরে দুটো বোমা ফেললে—ভীষণ আওয়াজ হোল—অন্ধকারের মধ্যে একটা আগুনের শিখার চমক দেখা গেল, কিন্তু লোকজনের চেঁচামেচি শোনা গেল না । মাকিন পুলিসম্যানটি বল্লে—পঞ্চাশ পাউণ্ডের বোমা ! দেখেছ কি কাগুট করলে বস্তিতে ! লোক সব নিশ্চয় পালিয়েছে। স্বরেশ্বর বল্লে—ওই দেখ, আর একদল বম্বার দেখা দিয়েছে দক্ষিণপূব্ব কোণে— অন্তত বারোখানা সারবন্দী হয়ে এগিয়ে আসছে । এরা যে এলোমেলো ভাবে বোমা ফেলছে না, তা বেশ বোঝা গেল—এদের ধ্বংস-লীলার মধ্যে প্ল্যান আছে, শুঙ্খলা আছে, সমস্ত শহরটা এবং তার প্রাস্তস্থিত এই দরিদ্র পল্লী চা-পেই ও অন্যান্য ছড়ানো গ্রামগুলোকে ওরা যেন কতকগুলো কাল্পনিক অংশে ভাগ করে নিয়েছে এবং নিয়ম করে প্রত্যেক অংশে বোমা ফেলছে—কোন অংশ পরিত্রাণ না পায় ! বিমল লক্ষ্য করলে অন্ধকারের মধ্যে বস্তির লোকজনেরা থানা-নালার মধ্যে অনেকে মুখ গুজে পড়ে আছে—একটা লোক একটা গাছের গুড়িতে প্রাণপণে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আছে! বি. র. ৯—৯