১৩৪ বিভূতি-রচনাবলী অন্ধকারে কারো মুখ দেখা যায় না—মেয়ে কি পুরুষ বোঝা যাচ্ছে না, যেন ভীত, সন্ত্রস্ত প্রেতমূৰ্ত্তি। সন্ধ্যাবেলার সেই বেপরোয়া ভাব আর নেই। একমুঠো ছড়ানো নক্ষত্রের মত কতকগুলো বোমা পড়লো দূরের একটা পাড়ায়—সাংহাইয়ের ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র সে জায়গাটা-পুলিশম্যানগুলো বলাবলি করছে। ওদিকে সেই প্লেনগুলো আবার আসছে, তবে এবার সার্চলাইট জালায় নি, অন্ধকারেই আসছে। কাছেই একটা পল্লীতে ওরা ছ’টা বোমা ফেল্পে, আন্দাজ এক একটা পঞ্চাশ পাউণ্ড ওজনের। পুলিশের ডেপুটি মার্শালের আদেশে ওরা সবাই সেদিকে ছুটলো । সেখানে এক ভীষণ দুখ । রাস্তায় লোকে লোকারণ্য, ভয়ের চোটে সতর্কত ভুলে সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দাড়িয়েছে। বাড়ীঘর চুরমার, আয়না, মাদুর, টেবিল, ছবি সব ছিটকে রাস্তায় এসে ছত্রাকার হয়ে পড়েছে—তারই মধ্যে এক জায়গাদ একটা প্রৌঢ় মহিলার ছিন্নভিন্ন বিকৃত মৃতদেহ । কিছুদূরে একটি স্বন্দরী বালিকার দেহ দু টুকরো হয়ে পড়ে আছে, তলপেটের নাড়িতুড়ি খানিকট বেরিয়ে ধুলোতে লুটিয়ে পড়েছে। এই সব বীভৎস দৃশ্বের মাঝখানে এক জায়গায় একটা ছোট মেয়ে ভয়ে উৰ্দ্ধশ্বাসে চোখ বুজে ছুটে একটা ছোট মাঠ পার হয়ে পালাচ্ছিল—পুলিশের লোক ওকে ধরে ফেল্পে । মেয়েটির বয়স ন’ বছর—সে ভয়ে এমনি দিশেহারা হয়ে পড়েছে যে প্রথম কিছুক্ষণ কথা বলতেই পারলে না। ওর হাতে একট। পুটুলি । পুটুলির মধ্যে কিছু শুকনো শূওবের মাংসের টুকরে। আর গোটাকতক কিশমিশ । তাকে খানিকক্ষণ ধরে জিগ্যেস করার পরে জানা গেল তাদের বাড়ীতে বোমা পড়বার পরে বাড়ী ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। কে কোথায় গিযেছে তা সে জানে না। সে কিছু খাবার সংগ্রহ করে পুটুলি বেঁধে নিয়ে পালাচ্ছে—তার বিশ্বাস, চোখ বুজে ছুটে পালালে বোমা ফেলে ধাবা, তারা ওকে দেখতে পাবে না। তাকে ডেকে নিয়ে প্রৌঢ়া মহিলার মৃতদেহ দেখানো হোল । খুকী চীৎকার করে কেঁদে উঠলো, ওই তার মা। পাশের বালিকাটি তার দিদি। ডেপুটি মার্শাল পাড়ার একজন লোক ডেকে মেয়েটির নাম ধাম, বাপের নাম ঠিকানা জেনে নিলেন, কারণ ছেলেমানুষ পুলিশের প্রশ্নের উত্তর ঠিকমত দিতে পারবে না। মেয়েটি পুলিশের জিন্মাতেই রইল-—কারণ শোনা গেল ওর বাবা বছর-তিন মারা গিয়েছেন, বিধবা মা আর দিদি ছাড়া সংসারে ওর আর কেউ ছিল না। একদল লোককে দেখা গেল ভাঙা বাড়ীগুলো থেকে জিনিসপত্র, মৃতদেহ টেনে বার করছে। ওরা টর্চ জেলে টর্চের মুখ নীচের দিকে নামিয়ে মৃতদেহ কি জ্যাস্ত মানুষ খুজে বেড়াচ্ছে, পাছে ওপর থেকে বেমারু প্লেনগুলো টের পায় । বিমল তাদের মধ্যে একজনকে চিনতে পারলে। সাগ্রহে সে ছুটে গেল - প্রোফেসর লি, প্রোফেসর লি– অন্ধকারের মধ্যে বিমলকে উনি চিনলেন। বল্লেন-আমি আমার ছাত্রের দল নিয়ে
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৪৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।