মরণের ডঙ্কা বাজে ১৩৭ আমাদের বদমাইশদের লিস্ট আমাদের কাছে আছে। আমি আজ এখুনি এর ব্যবস্থা করছি। ব্যস্ত হবেন না—বিদেশী গবর্নমেণ্টের কাছে এজন্তে আমাদের দায়িত্ব অত্যস্ত বেশী। সেদিন সারাদিন ওরী হাসপাতালে গেল না। ডাক্তার সাহেবকে জানিয়ে দিলে মিনি ও এ্যালিসের বিপদের কথা। কন্শেসনে যাবার জন্যে দুবার চেষ্টা করেও কৃতকাৰ্য্য হোল না। সে পথ লোকজনের ভিড়ে বন্ধ হয়ে আছে, তা ছাড়া ইয়াংসিকিয়াংয়ের পুলের ওপারের মুখে মেশিনগান বসানো। সারাদিন ধরে কি করুণ দৃশু সাংহাইয়ের বাইরের বড় বড় রাজপথগুলিতে ! লোকজন মোট-পুটুলি নিয়ে শহর ছেড়ে পালাচ্ছে—সাংহাই থেকে হোনান যাবার রাজপথ পলাতক নরনারীতে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। ভয়ানক গরমে এই ভিড়ে অনেকে সন্ধি-গৰ্ম্মি হয়ে মারাও পড়ছে। দুখান হাসপাতালের গাড়ী ওদের সাহায্যের জন্য পাঠানো হয়েছিল—কিন্তু ভিড় ঠেলে অগ্রসর হওয়া অসম্ভব দেখে গাড়ী দুখানা শহরের উপকণ্ঠে এক জায়গায় পথের ধারেই দাড়িয়ে রইল। একখানা গাড়ীর চার্জ নিয়ে বিমল সেখানে রয়ে গেল। সুরেশ্বর রইল তার সহকৰ্ম্মী হিসাবে। শীঘ্রই কিন্তু কি ভয়ানক বিপদে পড়ে গেল দুজনেই। ওরা অনেকক্ষণ থেকেই ভাবছিল এই ভীষণ ভিড়ের মধ্যে জাপানী প্লেন যদি বোমা ফেলে তবে যে কি কাণ্ড হবে তা কল্পনা করলেও শিউরে উঠতে হয়। বেলা দুটো বেজেছে। একজন তরুণ চীনা সামরিক কৰ্ম্মচারী মোটরবাইকে সাংহাইয়ের দিক থেকে এসে ওদের এ্যাম্বুলেন্স গাড়ীর সামনে নামলো। বল্লে—আপনারা এখান থেকে সরে যান— বিমল বল্লে—কেন ? —জাপানী সৈন্য শহরের বড় পাচিল ডিনামাইট, দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে—এখনো দুটো পাচিল বাকী—কিন্তু সন্ধ্যার মধ্যে ওরা সমুদ্রের ধারে সমস্ত দিকটা দখল করবে। আর আমরা খবর পেয়েছি পঞ্চাশখানা বোমারু প্লেন একঘণ্টার মধ্যে শহরের ওপর আবার বোমা ফেলবে । —এই লোকগুলোর অবস্থা তখন কি হবে ? —চীনের মহা দুর্ভাগ্য, স্যার। আপনার বিদেশী, আপনাদের প্রাণ আমরা বিপন্ন হতে দেবো না। আমরা মরি তাতে ক্ষতি নেই। আপনারা সরে যান এখান থেকে । একটি গাছের তলায় একটি বৃদ্ধ বসে। সঙ্গে একটা পুটুলি, গোটা-কতক মাটির হাড়িকুঁড়ি। মুখে অসহায় আতঙ্কের চিহ্ন। সামরিক কৰ্ম্মচারীটি কাছে গিয়ে বল্লে—কোথায় যাবে ? বৃদ্ধ ভয়ে ভয়ে সৈনিকটর দিকে চাইলো কিন্তু চুপ করে রইলো। উত্তর দিলে না। সৈনিকট আবার জিজ্ঞেস করলে—কোথায় যাবে তুমি ? তোমার সঙ্গে কে আছে ?
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৫০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।