yరీty বিভূতি-রচনাবলী এবারও বুড়ী কিছু বল্পে না । বিমল বল্লে—বোধ হয় কানে শুনতে পায় না। দেখছ না ওর বয়েস অনেক হয়েছে। চেচিয়ে বল। তরুণ সামরিক কৰ্ম্মচারী বৃদ্ধার নাতির বয়সী। কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে চীৎকার করে বল্লে—ও দিদিমা, কোথায় যাচ্ছ ? বুড়ী বিস্ময়ের দৃষ্টিতে ওর মুখের দিকে চেয়ে বল্লে—কোথায় আর যাবো ? সবাই যেখানে যাচ্ছে । —এখানে বসে থেকে না । বোমা পড়বে এক্ষুনি । সঙ্গে কেউ নেই ? বোমার কথা শুনেই বুড়ী ভয়ে আড়ষ্ট হোল, ওপরের দিকে চাইলে। বল্লে—আমি আর হাটতে পারছি না, আমার আর কেউ নেই, আমাকে তোমরা একখানা গাড়ীর ওপর উঠিয়ে Wié I বিমল বল্লে—আমি ওকে এ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে দিচ্ছি। বডড বয়েস হয়েছে, এতখানি পথ ছুটোছুটি করে এসে র্হাপিয়ে পড়েছে। দুজনে ওকে ধরাধরি করে গাড়ীতে এনে ওঠালে। এক জায়গায় একটি গৃহস্থ পরিবারের ঠিক এই অবস্থা। গৃহিণীর বয়েস প্রায় ত্রিশ-বত্রিশ, সাত আটটি ছেলেমেয়ে, সকলের ছোটটি দুগ্ধপোস্য শিশু, বাকী সব দুই, চার, পাচ, সাত এমনি বয়েসের । সঙ্গে একটিও পুরুষ নেই। ওরাও হঁটিতে না পেরে বসে পড়েছে। জিজ্ঞেস করে জানা গেল বাড়ীর কৰ্ত্ত জাহাজে কাজ করেন - জাহাজ আজ কুড়ি দিন হোল বন্দর থেকে ছেড়ে গিয়েছে। এদিকে এই বিপদ ! কাজেই মা ছেলেমেয়েদের নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন বাড়ী থেকে—কোথায় যাবেন ঠিক নেই। এদের অসহায় অবস্থা দেখে বিমলের খুব কষ্ট হোল। কিন্তু তার কিছু করবার নেই। কত লোককে সে হাসপাতাল গাড়ীতে জায়গা দেবে ? সেদিন শহরের এমন ভয়ানক অবস্থা গেল যে কে কার খোজ রাখে। মিনি ও এ্যালিসের উদ্ধারের কোন চেষ্টাই হোল না। সারা দিনরাত এমনি করে কাটুলো । রাত্রি শেষে জাপানী নৌসেনা সাংহাই শহরের দক্ষিণ অংশ অধিকার করলে। বিমল ও মুরেশ্বর তখন হাসপাতালে। ওরা কিছুই জানতো না। তবে ওরা এটুকু বুঝেছিল যে অবস্থা গুরুতর। সারারাত্রি ধরে জাপানী যুদ্ধ-জাহাজ থেকে গোলা বর্ষণ করলে। বোমারু প্লেনগুলোর তেমন আর দেখা নেই, কারণ শহর প্রায় জনশূন্য। পথে ঘাটে লোকজনের ভিড় 6नझे वजप्लट्टे 5ाज । রাত তিনটে। এমন সময় ওয়ার্ডের মধ্যে কয়েকজন সশস্ত্র সৈন্য ঢুকতে দেখে বিমল প্রথমটা বিস্মিত হোল ; তারপরই ওর মনে হোল এরা চীনা নয়, জাপানী সৈন্য। ক্রমে পিলপিল করে বিশ ত্রিশজন জাপানী সৈন্য হাসপাতালের বড় হলটার মধ্যে ঢুকলো । চারিদিকে শোরগোল শোনা গেল। রোগীর দল অধিকাংশই বোমায় আহত নাগরিক,
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৫১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।