মরণের ডঙ্কা বাজে $'వీs তারা ভয়ে কাঠ হয়ে রইল জাপানী সৈন্য দেখে । বিমল এক আছে ওয়ার্ডে । হাসপাতালের বড় ডাক্তার থানিকটা অাগে চলে গিয়েছেন। ওই এখন কৰ্ত্ত। দুজন চীন নার্স ভয়ে অন্য ওয়ার্ড থেকে ছুটে এসে বিমলের পেছনে দাড়ালো। হঠাৎ একজন জাপানী সৈন্য বন্দুক তুলে জমির সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে ধরলে—রাইফেলের অগিার ধারালো বেয়নেট ঝকৃঝকৃ করে উঠলে। চক্ষের নিমেষে সে এমন একটা ভঙ্গি করলে তাতে মনে হোল বিমলদের দেশে সি টকি জালে মাছ ধরবার সময় জালের গোড়ার দিকের বঁাশটা যেমন কাদাজলের মধ্যে ঠেলে দেয়—তেমনি । সঙ্গে সঙ্গে একটা অমাহুষিক আৰ্ত্তনাদ শোনা গেল, পাশের বিছানায় একটা চীন যুবক রোগী শুয়ে ভয়ে ভয়ে ওদের দিকে চেয়ে ছিল—বেওনেট, তার তলপেটট। গিথে ফেলেছে । চারিদিকে রোগীরা আতঙ্কে চীৎকার করে উঠলো। রক্তে ভেসে গেল বিছানাটা। সে এক বীভৎস দৃত। বিমলের মাথা হঠাৎ কেমন বেঠিক হয়ে গেল এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড দেখে। সে এগিয়ে এসে ইংরাজিতে বল্পে—তোমরা কি মানুষ না পশু ? জাপানী সৈন্যেরা ওর কথা বুঝতে পারলে না—কিন্তু ওর দাড়াবার ভঙ্গি ও গলার স্থর শুনে অকুমান করলে মানে যাই হোক, প্রীতি ও বন্ধুত্বের কথা তা নয়। অমনি সব ক'জন সৈন্য ওকে ঘিরে দাড়িয়ে বন্দুক তুললে । বিমল চোখ বুজলে –ও-ও বুঝলে এই শেষ । সেই দুজন চীন তরুণী নাস, যারা ওর পেছনে এসে আশ্রয় নিয়েছিল—তারা ভয়ে দিশাহারা হয়ে চেচিয়ে উঠলো । হাসপাতালের সবাই বিমলকে ভালবাসতো। এমন সময় বিমলের কানে গেল পেছন থেকে একটা সামরিক আদেশের ক্ষিপ্র, স্পষ্ট, তীক্ষ স্বর। জাপানী ভাষায় হোলেও তার অর্থ যেন কোন অভূত উপায়ে বুঝে ফেলে চোখ চাইলে। দরজার কাছে দাড়িয়ে একজন জাপানী সামরিক কৰ্ম্মচারী, লেফটেনন্টের ইউনিফর্ম পর। সৈন্যেরা ততক্ষণ বেওনেট নামিয়ে এক পাশে দাড়িয়েছে। জাপানী অফিসারটি এগিয়ে এসে জাপানী ভাষাতেই কি প্রশ্ন করলে। তিন চারজন সৈন্য একসঙ্গে ওর দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে কি বল্পে । জাপানী অফিসার বিমলের দিকে চেয়ে ভাঙা ইংরিজিতে বল্লে—তুমি আমার সৈন্যদের গালাগালি দিয়েছ ? বিমল বল্লে—তোমার সৈন্যরা কি করেছে তা আগে দেখ । এটা রেডক্রস হাসপাতাল । এখানে কেউ যোদ্ধা নেই। অকারণে তোমার সৈন্যরা আমার ওই রোগীটিকে খুন করেছে বেণ্ডনেটের ঘায়ে । জাপানী অফিসার একবার তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে রক্তাক্ত বিছানা ও মৃত রোগীর দেহটার দিকে চেয়ে দেখলে এবং তারপর সম্ভবত ভৎসিনার স্বরে সৈন্তদের কি বল্পে । তারপর বিমলের দিকে চেয়ে বল্লে—তুমি কোন দেশের লোক ? —ভারতীয় ।
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৫২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।