S8 ° বিভূতি-রচনাবলী —রেড ক্রসের ডাক্তার ? —না, আমি চীনা মেডিকেল ইউনিটের ডাক্তার । —ও, চীনেদের সাহায্য করতে এসেছ ভারতবর্ষ থেকে ? -ई] ! —আমার সৈন্যদের অপমান করতে তুমি সাহস কর ? —আমার সামনে আমার রোগী খুন করলে ওরা, তার প্রতিবাদ মাত্র করেছি। হঠাৎ জাপানী অফিসারটি ঠাস করে একটা চড় মারলে বিমলের গালে। পরক্ষণেই সেই ক্ষিপ্র, তীক্ষ, স্পষ্ট সামরিক আদেশের স্থর গেল ওর কানে–রাগে অপমানে, চড়ের প্রবল ঘায়ে দিশাহার ওর কানে। সব ক'জন সৈন্য মিলে তক্ষুনি ওকে ঘিরে ফেল্পে চক্ষের নিমেষে। দুজন ওকে পিছমোড় করে বাধলে চামড়ার কোমরবন্ধ দিয়ে। তারপরে ওকে নিয়ে হাসপাতালের বাইরে চললো রাইফেলের কুঁদের ধাক্কা দিতে দিতে। চীনা নাস দুজন ভয়ে কাঠ হয়ে চেয়ে রইল । বিমলকে যেখানে নিয়ে যাওয়া হোল, সেখানটা একটা ছোট মাঠের মত। একদিকে একটা নীচু বাড়ী। * মাঠের এক পাশে একটা ছোট টেবিল ও চেয়ার পেতে জনৈক জাপানী সামরিক কৰ্ম্মচারী বসে। তার চারিপাশে সশস্ত্র জাপানী সৈন্যের ভিড়। কিছুদূরে দেওয়াল থেকে পনেরো হাত দূরে একসারি রাইফেলধারী সৈন্য দাড়িয়ে। আরও অনেক জাপানী সৈন্য মাঠটার মধ্যে এদিকে ওদিকে দাড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছে । এ জায়গাটাতে কি হচ্ছে বুঝতে পারলে না। ওকে নিয়ে গিয়ে টেবিলের কিছু দূরে দাড় করালে সৈন্যরা, তখন ও চেয়ে দেখলে দুজন চীনাকে জাপানী সৈন্যরা ঘিরে টেবিলের সামনে দাড় করিয়ে রেখেছে। চেয়ারে উপবিষ্ট জাপানী অফিসারটি কি জিজ্ঞেস করছে সৈন্যদের। চীনা দুটি সৈন্য নয়, সাধারণ নাগরিক— বিমল ওদের দেখেই বুঝলে। একটু পরেই জাপানী অফিসারটি কি একটা আদেশ দিয়ে হাত নেড়ে চীনাদুটিকে সরিয়ে নিয়ে যেতে বল্পে । জাপানী সৈন্যেরা তাদের টেনে নিযে গিয়ে মাঠের ওদিকে যে বাড়ীটা, তার দেওয়ালের গায়ে নিয়ে দাড় করালে । চীনা লোক দুটির মুখে বিস্ময় ফুটে উঠেছে—তারা কলের পুতুলের মত জাপানীদের সঙ্গে চললো বটে, কিন্তু তাদের চোখের অবাক ভাব দেখে মনে হয় তারা বুঝতে পারে নি কেন তাদের দেওয়ালের গায়ে ঠেস্ দিয়ে দাড় করানো হচ্ছে। বিমলও প্রথমটা বুঝতে পারে নি, সে বুঝলে—যখন দশজন জাপানী সৈন্যের সারি এক যোগে রাইফেল তুল্লে। একটা তীক্ষ, স্পষ্ট, সামরিক আদেশ বাতাস চিরে উচ্চারিঙ হোল, সঙ্গে সঙ্গে দশটি রাইফেলের এক যোগে আওয়াজ। বিমল চোখ বুজলে।
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৫৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।