পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মরণের ডঙ্কা বাজে S8S যখন সে আবার চোথ চাইলে, তখন প্রথমেই যে কথ। তার মনে উঠলো, স্থান ও অবস্থা হিসেবে সেটা বড়ই আশ্চর্য্যের ব্যাপার বলতে হবে। তার সর্বপ্রথম মনে হোল—জাপানী রাইফেলের ধোয়া তো খুব বেশী হয় না! কেন একথা তার মনে হলে এই নিশ্চিত মৃত্যুর সম্মুখীন হয়ে—জীবনের এই ভীষণ সঙ্কটময় মুহূৰ্ত্তে, কে তা বলবে? তারপরই বিমল দেওয়ালের দিকে চেয়ে দেখলে চীনা দুটি উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে। দুজন জাপানী সৈন্য তাদের মৃতদেহের পা ধরে হিচড়ে টেনে একপাশে রেখে দিলে। তারা পাশাপাশি পড়ে রইল এমন ভাবে, দেখে বিমলের মনে হোল ওরা কোনো ঠাকুরের সামনে উপুড় হয়ে প্রণাম করছে। মানুষকে মানুষ যে এমন ভাবে হত্যা করতে পারে, বিমল তা আজ প্রথম দেখেছে হাসপাতালে, আর দেখলে এখন । এবার বিমলের পালা, বিমল ভাবলে । কিন্তু চেয়ে দেখলে আর চারজন চীনাকে আবার কোথা থেকে নিয়ে এসে জাপানী সৈন্যেরা টেবিলের সামনে দাড় করিয়েছে। এবারও পূৰ্ব্বের মতো কথা-কাটাকাটি হলো জাপানী অফিসার ও সৈন্যদের মধ্যে। তারপর আবার পূর্বের ব্যাপারের পুনরাবৃত্তি! এই চীনা চারজনও উপুড় হয়ে পড়লে দেয়ালের সামনে আগের দুজনের মত । চীনা ভাষা যদিও বা কিছু কিছু শিখেছে বিমল, জাপানী ভাষার তো সে বিন্দুবিসর্গ জানে না। কেন যে এদের গুলি করে মারা হচ্ছে, কি অপরাধে এর অপরাধী, কিছু বোঝা গেল না। আর এখানে জাপানীরাই কথাবাৰ্ত্তা বলছে, চীনাদের বিশেষ কিছু বলবার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না | বিমল ভাবছিল—এই দূর বিদেশে এখনি তার প্রাণ বেরুবে। মা বাবার সঙ্গে আর দেখা হলো না, হয়তো তারা জানতেও পারবেন না যে তার কি হয়েছে। শুধু একখানা চিঠি যাবে তাদের কাছে, তাতে লেখা থাকবে, ছেলে তাদের 'মিসিং—খুজে পাওয়া যাচ্ছে ন!... কিন্তু এ্যালিসের কি হলো! এ্যালিসের সঙ্গেও আর দেখা হবে না। এ্যালিসকে বড় ভাল লেগেছিল। কোথায় যে তাকে নিয়ে গিয়ে ফেলেছে ! বেচারী এ্যালিস্ ! বেচারী মিনি ! কিন্তু বিমলের পাল! আসতে বড় দেরি হতে লাগলো। দলে দলে চীনা নাগরিকদের টেবিলের সামনে দাড় করানো চলতে লাগলে । তারপর তাদের হত্যা করাও সমানভাবে চলছে। মৃতদেহ ক্রমেই স্তুপাকার হয়ে উঠছে। এ রকম নিষ্ঠুর হত্য-দৃশু আর দেখা যায় না চোখে । বিমলকে এইবার দুজন জাপানী সৈন্য নিয়ে গিয়ে টেবিলের সামনে দাড় করিয়ে দিলে। বিমল অনুভব করলে তার ভয় হচ্ছে না মনে—কিন্তু একটা জিনিস হচ্ছে। জর আসবার আগে যেমন গা বমি-বমি করে, ওর ঠিক তেমনি হচ্ছে শরীরের মধ্যে ।