এক শঙ্কর একেবারে অজ পাড়াগায়ের ছেলে। এইবার সে সবে এফ, এ পাশ দিয়ে এসে গ্রামে বসেছে। কাজের মধ্যে সকালে বন্ধুবান্ধবদের বাড়ীতে গিয়ে আড্ডা দেওয়া, দুপুরে অাহারান্তে লম্বা ঘুম, বিকেলে পালঘাটের বাওড়ে মাছ ধরতে যাওয়া। সারা বৈশাখ এভাবে কাটবার পরে একদিন তার মা ডেকে বললেন—শোন একটা কথা বলি শঙ্কর। তোর বাবার শরীর ভাল নয়। এ অবস্থায় আর তোর পড়াশুনো হবে কি করে ? কে খরচ দেবে ? এইবার একটা কিছু কাজের চেষ্টা দেখ, । মায়ের কথাটা শঙ্করকে ভাবিয়ে তুললে। সত্যিই তার বাবার শরীর আজ ক’মাস থেকে খুব খারাপ যাচ্ছে। কলকাতার খরচ দেওয়া তার পক্ষে ক্রমেই অসম্ভব হয়ে উঠছে। অথচ করবেই ৰ৷ কি শঙ্কর ? এখন কি তাকে কেউ চাকরি দেবে ? চেনেই বা সে কাকে ? আমরা যে সময়ের কথা বলছি, ইউরোপের মহাযুদ্ধ বাধতে তখনও পাচ বছর দেরি। ১৯০৯ সালের কথা। তখন চাকরির বাজার এতটা খারাপু ছিল না। শঙ্করদের গ্রামের এক ভদ্রলোক শু্যামনগরে না নৈহাটতে পাটের কলে চাকরি করতেন। শঙ্করের মা তার স্ত্রীকে ছেলের চাকরির কথা বলে এলেন। যাতে তিনি স্বামীকে বলে শঙ্করের জন্তে পাটের কলে একটা কাজ যোগাড় করে দিতে পারেন। ভদ্রলোক পরদিন বাড়ী বয়ে বলতে এলেন যে শঙ্করের চাকরির জন্যে তিনি সাধ্যমত চেষ্টা করবেন। শঙ্কর সাধারণ ধরনের ছেলে নয়। স্কুলে পড়বার সময় সে বরাবর খেলাধুলোতে প্রথম হয়ে এসেছে। সেবার মহকুমার একৃজিবিশনের সময় হাইজাম্পে সে প্রথম স্থান অধিকার করে মেডেল পায়। ফুটবলে অমন সেন্টার ফরওয়ার্ড ও অঞ্চলে তখন কেউ ছিল না। সাতার দিতে তার জুড়ি খুজে মেলা ভার। গাছে উঠতে, ঘোড়ায় চড়তে, বক্সিংএ সে অত্যন্ত নিপুণ। কলকাতায় পড়বার সময় ওয়াই. এম. সি. এ.-তে সে রীতিমত বক্সিং অভ্যাস করেছে। এই সব কারণে পরীক্ষায় সে তত ভাল করতে পারে নি, দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিল। কিন্তু তার একটি বিষয়ে অদ্ভূত জ্ঞান ছিল। তার বাতিক ছিল যত রাজ্যের ম্যাপ ঘাট ও বড় বড় ভূগোলের বই পড়া। ভূগোলের অঙ্ক কষতে সে খুব মজবুত। আমাদের দেশের আকাশে যে-সব নক্ষত্রমণ্ডল ওঠে, তা সে প্রায় সবই চেনে—ওটা কালপুরুষ, ওটা সপ্তর্ষি, ওটা ক্যাসিওপিয়া, ওটা বৃশ্চিক, কোন মাসে কোনট ওঠে, কোন দিকে ওঠে—সব ওর নখদর্পণে । আকাশের দিকে চেয়ে তখনি বলে দেবে। আমাদের দেশের বেশী ছেলে যে এসব জানে না, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে। এবার পরীক্ষা দিয়ে কলকাতা থেকে আসবার সময়ে সে একরাশ ওই সব বই কিনে এনেছে, নির্জনে বসে প্রায়ই পড়ে আর কি ভাবে ওই জানে। তার পর এল তার বাবার বি. র. ৯—১
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।