Ꮌ8br বিভূতি-রচনাবলী বিমলের মনে পড়লে চীনা নাইনৰ্থ-রুট, আমির সঙ্গে একটি নারী বাহিনী আছে—সে সাংহাই চীন রেডক্রস্ হাসপাতালে শুনেছিল বটে। এরাই সেই চীনা মেয়ে-যোদ্ধার দল । এদের কম্যাণ্ডাণ্ট, কিন্তু মেয়ে নয়—পুরুষ । একটা পাইনকাঠের পুরোনো ভাঙ্গা টেবিলের সামনে সম্ভবতঃ একটা উপুড় করা কলসী বা ওই রকম কোন হাস্যকর জিনিস পেতে খুব লম্ব। গোপ-ওয়ালা কম্যাণ্ডাণ্ট বসে ছিলেন। মেয়েরা বিমলকে ধরে নিয়ে গেল সেখানে । বিমলের মনে হোল সমগ্র নারী বাহিনীর মধ্যে এই লোকটি ইংরাজী জানে এবং বেশ ভাল আমেরিকান টানের ইংরাজী বলে। বিমলের আপাদমস্তক ভাল করে দেখে প্রশ্ন করলে—তুমি জাপানীদের লোক ? — না। আমি চীন। হাসপাতালের ডাক্তার। —কোথাকার হাসপাতাল ? —সাংহাইয়ের রেডক্রস্ হাসপাতাল । আমাকে ওরা বন্দী করে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিল। —তুমি কোন দেশের লোক ? —ভারতবর্ষের । চীনা মেডিকেল ইউনিটের আমি সভ্য। কম্যাগুণ্টি, বিস্ময়ের স্বরে বল্লে—ও ! তা ডোবার জলে কি করছিলে ? বিমল লজ্জিত হোল । এতগুলি মেয়ের সামনে । বল্লে—লুকিয়ে ছিলুম। ওদের অসতর্ক মুহূৰ্ত্তে ওদের হাত থেকে পালিয়ে ডোবার জলে লুকিয়েছিলুম। তার পর হঠাৎ হ্যাণ্ড গ্রিনেডের আওয়াজ আর চীৎকার শুনলাম, তখনই ভাবলাম চীনা সৈন্য আক্রমণ করেছে ওদের । কথাবাৰ্ত্ত চলছে এমন সময়ে গ্রামের পথে কি একটা গোলমাল উঠলো। কম্যাণ্ডাণ্ট কে ঘিরে যারা ছিল, তারা চমকে উঠে সেদিকে ছুটতে লাগল। আবার কি জাপানী সৈন্তের দল আক্রমণ করেছে ? বিমল চেয়ে দেখল জনকয়েক সৈন্য যেন কাউকে ধরে আনছে—তাদের পেছনে পেছনে অনেক সৈন্য মজা দেখতে আসছে। ব্যাপার কি ? হয়তো কোন জাপানী সৈন্য ওদের হাতে ধরা পড়েছে, তাকে সকলে মিলে ধরে আনছে—নিশ্চয়ই । কিন্তু দলটি কম্যাণ্ডাণ্টের কাছে এসে পৌছে যখন ওদের প্রথামত সামরিক অভিবাদন করে দুজন বন্দীকে এগিয়ে নিয়ে দাড় করাল কম্যাণ্ডাণ্টের সামনে–বিমল চমকে উঠে কাঠের মত দাড়িয়ে রইল কতক্ষণ। কারণ কিছুক্ষণ পরে তার মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বর বেরুলো—এ্যালিস্! মিনি। সামনের শীর্ণকায়া মূৰ্ত্তি দুটি এ্যালিস ও মিনি ছাড়া আর কেউ নয়। কিন্তু ওদের হাত প। বাধা—মুখে কাপড় দিয়ে বাধা। এমন শক্ত করে বাধা যে ওদের কথা বলবার উপায় নেই। ভয়ানক রাগ হোল বিমলের এক মুহূৰ্ত্তে এই চীনা নারী-বাহিনীর ওপর। মেয়ে হয়ে মেয়ের ওপর এমন নিষ্ঠুর অত্যাচার। ওদের এমন করে বেঁধে আনার অর্থ কি? ওরা ছিলই বা কোথায় ?
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৬১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।