মরণের ডঙ্কা বাজে Ꮌ 8$ কমাণ্ডাণ্ট, উত্তেজিত স্বরে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতে লাগলো। ইতিমধ্যে এ্যালিস্ ও মিনির হাত-পা মুখের বঁাধন খুলে দেওয়া হোল। ব্যাপারটা ক্রমশঃ যা জানা গেল তা হোল এই— চীন নারী সৈন্যেরা এদের গ্রামের একটা ঘরের মধ্যে অন্ধকার কোণে এই অবস্থাতেই পায়। বাইরে থেকে ঘরের দরজায় তালা দেওয়া ছিল—কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে অস্পষ্ট গোঙানির আওয়াজে সন্দেহ করে ওরা দরজা ভেঙে দেখতে পায় এদের। ওরা বুঝতে পেরেছে যে এরা ইউরোপীয় বা আমেরিকান মহিলা। কিন্তু চীনের এই সুদূর পাড়াগায়ে একটা অন্ধকার ঘরের কোণে এদের কে এ অবস্থায় এনে ফেলেছে তা না বুঝতে পেরে সবাই মহা বিস্ময়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। হঠাৎ বিমল বলে উঠলো--এ্যালিস ! মিনি । প্রথমে চমকে উঠে ওর দিকে চাইলে এ্যালিস। বিমলকে দেখে সে যেন প্রথমটা চিনতে পারলে না—তারপর প্রায় ছুটে ওর কাছে এসে বিস্মিত চকিত আনন্দভর কণ্ঠে বল্লে—তুমি এখানে । সঙ্গে সঙ্গে মিনিও ছুটে এল। মিনির চেহারাটা বড্ড খারাপ হয়ে গিয়েছে নানা কষ্টে, উদ্বেগে, এবং খুব সম্ভবতঃ অনাহারেও বটে। সে বল্লে, তোমার বন্ধু কই ? ঘণ্টা কয়েক পরে । একটা রিচ গাছের তলায় বসে মিনি, এ্যালিস ও বিমল কথা বলছিল। এখনও রাত আছে, তবে পূর্ব আকাশে শুকতার উঠেছে—ভোর হওয়ার বেশী দেরি নেই। মিনি ও এ্যালিস তাদের গল্প বলে যাচ্ছিল । ওদের ভাল করে খেতে দেওয়া হয়েছে, কারণ ওদের মুখ দেখে মনে হচ্ছিল পেট ভরে খাওয়া ওদের অদৃষ্টে অনেকদিন ধরে জোটেনি। বিমল বল্লে—এখানে তোমরা কি করে এলে ? এ্যালিস বল্লে—এখনও ঠিক গুছিয়ে বলতে পারবো না, কিন্তু বড় খুশী হয়েছি তোমায় দেখে, বিমল। আমরা তো আশঙ্কা করছিলাম জাপানীরা আক্রমণ করেছে—এইবার ঘর জালিয়ে আমাদের বন্দী অবস্থায় পুড়িয়ে মারবে—কে আর উদ্ধার করবে আমাদের ? অার আমাদের অস্তিত্ব জানেই বা কে ? —কবে তোমরা এ গ্রামে এসেছ ? —আজ তিন দিন হোল খুব সম্ভব—কারণ দিনরাত্রির জ্ঞান আমাদের বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। —কে তোমাদের আনে ? —কয়েকজন চীনা দস্থ্য । —সাংহাইয়ের চণ্ডুর আড়ায় তোমাদের নিয়ে গিয়েছিল ধরে ? এ্যালিস্ বিস্ময়ের স্বরে ওর মুখের দিকে চেয়ে বল্লে—তুমি কি করে জানলে ? বিমল হেসে বল্লে—আমি আর সুরেশ্বর সেই চণ্ডুর আডডাতে যাই তোমাদের খুঁজতে । বি. র. ৯—১০
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৬২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।