পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ጏ® © বিভূতি-রচনাবলী কিন্তু বড় বিভ্ৰাট বেধে গেল সে রাত্রে। জাপানী বম্বারগুলো সেই রাত্রে ভীষণ বোমা বর্ষণ শুরু কল্পে মিনি বল্প, আমরা খুব জানি। আমরা তখন হাতমুখ বাধা অবস্থায় একটা গরুর গাড়ীর মধ্যে শুয়ে। একটা বোমা তো আমাদের গাড়ির পাশেই পড়লো। এ্যালিস বল্লে—তারপর ওরা আমাদের নানা জায়গায় ঘোরালে। দশ হাজার ডলার মুক্তিপণ না দিলে আমাদের ছাড়বে না। দেশের বাপমায়ের কাছে চিঠি লিখবে বলে ঠিকান চেয়েছিল—আমরা দিইনি। আজ ওরা আমাদের শাসিয়েছিল জাপানী সৈন্যেরা গ্রাম জালিয়ে দেবে—ঠিকানা যদি না দিই তবে ঘরের মধ্যে বেঁধে রেখে পালাবে—আমরা নিঃশব্দে পুড়ে মরবো। করেছিলও তাই । চীনা মেয়ে-সৈন্যেরা না এলে জাপানীরা গ্রাম জালিয়ে দিত। আমরাও পুড়ে মরতাম । বিমল বল্লে—কি সৰ্ব্বনাশ ! এ্যালিস্ বল্লে—সৰ্ব্বনাশ আর কি, পুড়ে মরতাম এর আর সর্বনাশ কি ? কতই তো মরছে! কিন্তু তুমি এখানে কি করে এলে, বিমল ? —আমাকে হাসপাতাল থেকে জাপানীরা বন্দী করে এনেছিল। আমি নাকি স্পাই । এতদিন গুলি করেই মারতে যদি একথা ওদের না বলতুম যে ব্রিটিশ কনস্থলেট আপিসে আমার নাম রেজেষ্ট্রি করা আছে। মিনি বল্লে—সুরেশ্বর কোথায় গেল একট। খোজ করতে হয়। আর আমেরিকান কনস্থলেটে আমাদের বিষয়ে একটা খবর দিতে হয়—চলে৷ কমাণ্ডাণ্ট কে বলি । জনকয়েক তরুণী চীনা মেয়ে-সৈন্য ওদের হাসিমুখে ঘিরে দাড়ালো। এদের হাস্যদীপ্ত স্বন্দর চেহারা বিমলের বড় ভাল লাগলো, এমন একটা জিনিস নতুন দেখছে সে—বহুশতাব্দীর জড়তা দূর করে পুরুষের পাশে এসে দাড়িয়েছে নারী—রণক্ষেত্রের নিষ্ঠুরতা, কঠোরতার মধ্যে। দেশের দুদিনে দেশমাতৃকার সেবাযজ্ঞে তারা আজ মস্ত বড় হোতা—মিথ্যে জড়তা, মিথ্যে লজ্জা-সঙ্কোচ দূর করে ফেলেছে টেনে । একটি মেয়ে ইংরেজিতে বল্লে—তোমরা হ্যাংচাউতে রাজকুমারী তাংএর দেউল দেখেছ? এ্যালিস বল্লে—না, সে কি ? —পাচশো বছর আগে মিং রাজবংশের একজন রাজকুমারী ছিলেন তাং । তার পুণ্যচরিত্র এখনও আমাদের দেশের লোকের মুখে মুখে আছে। এখান থেকে বেশী দূর নয় —দেখে খেও । বিমল বল্লে—তুমি বেশ ইংরেজি বলতে পারে তো ? মেয়েটি এমন হাসলে যে তার তেরচা চোখ দুটাে বুজে গিয়ে দুটাে কালো রেখার মত দেখাতে লাগলো। —ভাল ইংরিজি বলছি । তবুও এ ইয়াংকি ইংরিজি। মিশনারী স্কুলে পাচ বছর পড়েছিলুম একসময়ে। ইংরিজি গান পৰ্য্যন্ত গাইতে পারি—শুনবে ? হঠাৎ বিউগল বেজে উঠলো। সবাই ব্যস্ত হয়ে কমাণ্ডান্টের তাবুর দিকে চললে। এখনি