পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মরণের ডঙ্কা বাজে S&S মার্চ শুরু করতে হবে। খবর পাওয়া গিয়েছে জাপানীদের বড় একটা দল এখানে আসছে। বিমল বা দিকে চেয়ে দেখলে। একটা অনুচ্চ পাহাড়ের মত লম্বা ঢিবির আড়াল থেকে মাঝে মাঝে যেন সাদা ধোয় বার হচ্ছে—আর সঙ্গে সঙ্গে ফট্‌ফট্‌ শব্দ হচ্ছে। শব্দটা অনেকটা যেন বিমলদের দেশের লিচুবাগানে পার্থী তাড়াবার জন্যে চেরা বঁাশের ফটাফট, আওয়াজের মত। রাইফেল ছোড়ার শব্দ। আধুনিক যুদ্ধে ব্যবহৃত রাইফেলে শব্দ হয় খুব কম–বিমল জানতো | সবাই বল্লে—মার্থী নীচু করে।—মাথা নীচু করো— জাপানী সৈন্যরা আক্রমণ করে ওই ঢিবিটাতে আড়াল নিয়েছে—কিন্তু হয়তো এখুনি বেওনেট চার্জ করবে কিংবা হ্যাণ্ড গ্রিনেড নিয়ে ছুটে আসবে। চক্ষের নিমেষে সবাই উপুড় হয়ে শুয়ে রাইফেলের মুখ ঢিবিটার দিকে ফেরালে । একটি মেয়ে হঠাৎ অস্পষ্ট চীংকার করে উপুড় অবস্থা থেকে চিৎ হয়ে গেল—তার হাত থেকে বন্দুকটা ছিটকে গিয়ে পড়লে। আর একটি মেয়ের পিঠের ওপরে—সে কিছু দূরে উপুড হয়ে শুয়ে ছিল বন্দুক বাগিয়ে। এ্যালিস্ ছুটে উঠে গিয়ে মেয়েটির মাথা নিজের কোলে তুলে নিলে—আশপাশের মেয়েরা বল্লে—মাথা নীচু-মাথা নীচু—শুয়ে পড়ো— বিমল শঙ্কিত চোখে অল্পক্ষণের জন্যে এ্যালিসের দিকে চেয়ে দেখলে—তারপর সেওঁ উঠে গিয়ে এ্যা লসের পাশে বসলো । আহত মেয়ে-সৈনিকের হাতের নাড়ী দেখে বল্লে—এ শেষ হয়ে গিয়েছে। এঃ, এই দ্যাখো গলায় লেগেছে গুলি—তোমার কাপড় যে রক্তে ভেসে গেল । এ্যালিসকে এক রকম জোর করে টেনে বিমল তাকে আবার উপুড় করে শোয়ালে। বিমল ভাবছিল, এখুনি যদি দুৰ্দ্দাস্ত জাপানী গ্রিনেডিয়ারেরা হ্যাও গ্রিনেড নিয়ে ছুটে আসে ঢিবিটা ডিঙিয়ে, তবে এই শায়িত নারী-সৈনিকের দল একটাও টিকৃবে না। জাপানী হ্যাণ্ড গ্রিনেডের বিস্ফোরণের ফল অতি সাংঘাতিক, এদের কমাণ্ডাণ্ট কি ভরসায় এদের এখনো শুইয়ে রেখেছে ? মরবে তো সবগুলোই মরবে। যা করে করুক, ওদের সৈন্য ওরা বাচাতে হয় বঁাচাক, নয় তো যা হয় করুক। কিন্তু মিনি ও এ্যালিসের জীবন আবার বিপন্ন হোল । ফটাফট —ফটাফট – আবার একটা অস্ফুট শব্দ । তারপর বিমল চেয়ে দেখলে চীৎকার না করেও সারির মাঝামাঝি দুটি মেয়ে উপুড় অবস্থাতেই মুখ গুজড়ে পড়ে আছে। হাতের শিথিল মুঠিতে তখনও রাইফেল ধরাই রয়েছে। তার মধ্যে একটি মেয়ের মুখ থেকে রক্ত বার হয়ে সামনের মাটি রাঙা হয়ে গিয়েছে। অার একটি মেয়েও দেখতে দেখতে মুখ গুজে পড়ে গেল । আ:—কি ভীষণ হত্যাকাও ! পুরুষদের এরকম অবস্থায় দেখলে সহ করা হয় তো যায়কিন্তু এই ধরণের নারী-বলির দৃশুটা বিমলের কাছে অতি করুণ ও অসহনীয় হয়ে উঠলো!