মরণের ডঙ্কা বাজে Y®ግ এখান থেকে অধিমাইলের মধ্যে। একটা ক্ষুদ্র গ্রাম জাপানীরা দখল করে সেখানে ঘাটি করেছে—চীন সৈন্য ওদের সেখান থেকে তাড়াবার চেষ্টা করছে। কমাণ্ডাণ্টের আদেশে মেয়ে-সৈনিকরা রান্নাবান্না করে খাবার আয়োজন করতে লাগলো—কারণ অনেকক্ষণ তারা বিশেষ কিছু খায়নি। বিমল বল্লে—খাইয়ে নিয়ে এদের কি এখন যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হবে ? কমাণ্ডাণ্ট বল্লে—না, এরা পরিশ্রাস্ত। ক্লাস্ত সৈন্যদের দিয়ে যুদ্ধ হয় না—ওদের অন্ততঃ দশঘণ্টা বিশ্রাম করতে দেবো । —তারপর ? —তারপর যুদ্ধে পাঠাতে পারি—রিজার্ড রাখতে পারি। এখান থেকে সাত মাইল দূরে হ্যান্কাউ-ক্যান্টন রেলের ধারে একটা গ্রামে নাইনথ-কটু আমির এক ঘাটি। সেখানে জেনারেল মাও-সি-তুং আছেন—তার হুকুম মত কাজ হবে। —হুকুম আসবে কি করে ? —ঘোড়ার পিঠে যায় আসে ডেস্প্যাচ দল। আমাদের ফিল্ড, টেলিফোন নেই। কমাণ্ডান্টের সঙ্গে কথা বলে ফিরে গিয়ে বিমল হাসপাতাল তাবুতে আহত সৈন্যদের চিকিৎসার কাজে মন দিল। তিনটি হতভাগ্য সৈনিক কোনোপ্রকার সাহায্য পাবার পূর্বেই মারা গেল। বাকী কয়েকজনের করুণ আৰ্ত্তনাদে হাসপাতাল মুখরিত হয়ে উঠলো। কি নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক ব্যাপার এই যুদ্ধ ! একথা বিমলের মনে না এসে পারলো না । এ্যালিস্ এসে বল্লে—এদের জন্যে বৃথা চেষ্টা । এদের একজনও বাচবে না। বিমল বল্লে—তাই মনে হয়। না আছে ওষুধ, না আছে যন্ত্রপাতি, কি দিয়ে চিকিৎসা করবো ? –বিমল, এদের জন্যে আমেরিকান রেড ক্রসে লিখে কিছু জিনিস আনার চেষ্টা করবো ? —লেখো না। নইলে সত্যি বলছি আমাদের খাটুনি বৃথা হবে। —ঠিকই তো ? এটা কি একটা হাসপাতাল ? কি ছাই আছে এখানে ? —মিনি কোথায় গেল ? —সে রাঁধছে। খেতে হবে তো? রাধবারও কোন বন্দোবস্ত নেই। দুটি চাল ছাড়া আর কিছু দেয় নি। –টনবন্দী খাবার কিছু সাংহাই থেকে আনিয়ে নিই। ও খেয়ে তোমরা বঁাচবে না। —একটা কথা শোনো। তুমি একবার সাংহাই যাও—মিনি সুরেশ্বর সম্বন্ধে বড় উদ্বিগ্ন হয়েছে আমায় বলছিল। ও আমায় কাল থেকে বলচে তোমায় বলতে | —আমিও যে তা না ভেবেছি এমন নয়। কিন্তু সাংহাই পৰ্য্যন্ত কোনো ট্রেন এখান থেকে যাচ্চে না তো ? আচ্ছা, কাল কমাণ্ডাণ্ট কে বলে দেখি । আবার চারজন আহত সৈনিককে স্ট্রেচারে করে আন হোল। একজনের মাথার খুলি অৰ্দ্ধেকটা উড়ে গিয়েছে বল্লেই হয়। বিমল বল্লে—এ তো গেল ! একে এখানে কেন এনেছে ?
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৭০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।