বিভূতি-রচনাবলী هو لا কিছুক্ষণ পরে দুঃস্থ চীনা নরনারীদের তাবুতে স্বরেশ্বর, বিমল, এ্যালিস্ ও মিনি আপেলবিলি কাজে প্রফেসর লি'র সাহায্য করছিল। এ জায়গা ঠিক ত্বাবু নয়, একটা পাইন বন, তার মাঝে মাঝে পুরোনো ক্যাম্বিস, চট, মাদুর, ভাঙা টিন প্রভৃতি জোড়াতালি দিয়ে আশ্রয় বানিয়ে তারই মধ্যে হতভাগ্য গৃহহারার দল মাথা গুজে আছে। ওদের দুর্দশা দেখে বিমলের কঠিন মনেও দুঃখ ও সহানুভূতির উদ্রেক হোল। ছোট ছোট উলঙ্গ, ক্ষুধাৰ্ত্ত, কাদামাটিমাখা শিশুদের ব্যগ্র প্রসারিত হাতে আপেল বিলি করবার সময় সময় এ্যালিসের চোখ দিয়ে জল পড়তে দেখলে বিমল । না;—বড় ছেলেমানুষ এই এ্যালিস !•••এ্যালিসের প্রতি একটা কেমন অকারণ স্নেহে ও মমতায় বিমলের মন গলে যায়। কি স্বন্দর মেয় এ্যালিস্ আর কি ছেলেমাকুষ ! হঠাৎ একটা আশ্চৰ্য্য ব্যাপার দেখা গেল। আপেল বিলি করতে করতে প্রোফেসর লি এক সময় একটা আপেলের পিপের মধ্যে ঘাড় নীচু করে দেখে বল্পেন—চারটে আপেল আর বাকী আছে। আমি কালিফোনিয়ার আপেল কখনো খাইনি—একটি আমি খাবো। বলেই সদানন্দ বৃদ্ধ বালকের মত আনন্দে একটা আপেল তুলে নিয়ে খেতে আরম্ভ করে দিলেন। বিমল অবাক, সে যেন একটা স্বৰ্গীয় দৃশ্ব দেখলে। শ্রদ্ধায় ও ভক্তিতে তার মাথা লুটিয়ে পড়তে চাইল বৃদ্ধের পায়ে। সঙ্গে সঙ্গে একটা অদ্ভুত ধরণের ভালবাসা এসে তার মনে উপস্থিত হোল, বৃদ্ধের প্রতি। একে ছেড়ে আর সে থাকতে পারবে না—অসম্ভৰ ! যেমন সে আর এ্যালিসকে ছেড়ে কখনো থাকতে পারবে না। চীনদেশে তার আসা সার্থক হয়েছে এই দু'জনের সাক্ষাৎ পেয়ে। এই যুদ্ধের বর্বরতা, হত্য, বোমাবর্ষণ, রক্তপাত, অনাহার, দারিদ্র্য, এই চারিদিকের বীভৎস নরবলীর হৃদয়হীন অনুষ্ঠানের মধ্যে প্রোফেসর লি আর এ্যালিস্ (অবশ্য মিনিও আছে )—এদের আবির্ভাব দেবতার আবির্ভাবের মতই অপ্রত্যাশিত ও সুন্দর। এ্যালিস ও মিনি ছুটে গেল ছেলেমানুষের মত। 3. —ড্যাডি, ড্যাডি, আমাদের একটা আপেল দেবে না ?-- বৃদ্ধ হাসিমুখে বল্পেন—মেয়েদের না দিয়ে কি বুড়ো বাবা খায় ? ছুটি রেখে দিয়েছি তোমাদের দুজনের জন্যে—আর একটি বাকী আছে, কে নেবে ? বিমল বল্লে—সুরেশ্বর নাও। স্বরেশ্বর বল্লে—বিমল, তুমি নাও, আমি আপেল খাই না। এ্যালিস বল্লে—খাও, স্বরেশ্বর, আমি আমার আধখানা বিমলকে দিচ্ছি। মিনি বল্লে—তা নয়, বিমল থাও, আমি আধখান। সুরেশ্বরকে দেবো । প্রোফেসর লি মীমাংসা করে দিলেন-- একটা আপেল ভাগাভাগি করে খাবে বিমল ও স্বরেশ্বর। মেয়ের আস্ত আপেল খাবে। তার কথার ওপর আর কেউ কথা বলতে সাহস করলে না । সেই সৈনিক ডেসপ্যাচ-রাইডারটি এসে খবর দিলে, হাসপাতাল তাবু এখানেই উঠে
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৭৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।