পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬২ বিভূতি-রচনাবলী উঠে আঙ্গুল দিয়ে কি দেখিয়ে প্রায় আৰ্ত্তনাদ করে উঠলো। সেই তরুণ ডেস্প্যাচ-রাইডারের দেহ অস্বাভাবিক ভাবে শায়িত কিছু দূরে। রক্তে আশপাশের মাটি ভেসে গিয়েছে—একখানা হাত উড়ে গিয়েছে—বীভৎস দৃপ্ত। সেদিকে চাওয়া ধায় না । কিন্তু দেখা গেল পলাতক গৃহহীন ব্যক্তিদের খুব বেশী ক্ষতি হয়নি। কয়েকটি ছেলেমেয়ে এবং একটি বৃদ্ধ জখম হয়েছে মাত্র। পাইনবনের পাতার আড়ালে ছিল এরা—ওপর থেকে বোমার লক্ষ্য ঠিকমত হয়নি। প্রোফেসর লি’র সঙ্গে এ্যালিস্ ও মিনি আহতদের সাহায্যে অগ্রসর হোল। সন্ধ্যার পরে একখানা ট্রেন এসে দাড়াল। নাইনথ-রুট আমির একটা ব্যাটালিয়ন ট্রেন থেকে নামলো- এরা এসেছে রেলপথ রক্ষা করতে এবং দুটো সাকো পাহারা দিতে। বিমল সুরেশ্বরকে বল্লে -আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে বলতে গেলে একরকম বাস করচি, অথচ লড়াই যে কোনদিকে হচ্ছে—কি ভাবে হচ্ছে—তা কিছুই জানি নে, চোখেও দেখতে পাচ্ছি নে। রাত্রে কমাণ্ডাণ্টের সারকুলার বেরুলো—রেললাইনের প্রাস্ত পৰ্য্যস্ত যুদ্ধক্ষেত্র বিস্তৃত হয়েছে —আজ শেষ রাত্রে জাপানীরা আক্রমণ করবে—সকলে তৈরী থাকে, যারা সৈন্য নয় যুদ্ধ করছে না—এমন শ্রেণীর লোক দূরে চলে যাও। রাত প্রায় বারোটা। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। স্বরেশ্বর বর্ষাতি কোট গায়ে বাইরে থেকে হাসপাতাল তাবুতে ঢুকে বল্লে—আমাদের আয়ু মনে হচ্ছে ফুরিয়ে এসেছে। সারকুলার দেখেছ ? বিমল বল্লে–গতিক সেই রকমই বটে। জাপানীরা হ্যাও গ্রিনেড, চার্জ করলে কেউ বাচবে না। —আমি ভাবছি মেয়েদের কথা— —প্রোফেসর লি’কে কথাটা বলা ভালো। উনি কি বলেন দেখি । প্রোফেসর লি’কে ডাকতে গিয়ে একটা স্বন্দর দৃশু বিমলের চোখে পড়লো। হাসপাতাল তাবুকু,পাশে একটা ছোট চটে-ছাওয়া তাবুতে এ্যালিস্ ও মিনি কি রান্না করছে আগুনের ওপর—বৃদ্ধ লি ওদের কাছে উকুন ঘেষে বসে বুড়ো ঠাকুরদাদার মত গল্প করছেন। এ্যালিস বল্লে—তোমার বন্ধু কোথায় বিমল—খেতে হবে না তোমাদের আজ ? ড্যাডি আমাদের এখানে খাবেন। উৎ—কি সত্যি কথা। গোলমালে তার মনেই নেই যে সন্ধ্যা থেকে কারো পেটে কিছু যায় নি! বিমল সুরেশ্বরকে ডেকে নিয়ে এল। খাবার বিশেষ কিছু নেই। শুধু ভাত ও শুকনো সিঙ্গাপুরী কাচকল, চব্বিতে ভাজ। একজন ডেস্প্যাচ-রাইডার ব্যস্তভাবে তাবুর বাইরে এসে বিমলকে ডাক দিলে। তার হাতে একখানা ছোট্ট সিল-করা খাম । —আপনি হাসপাতালের ডাক্তার ? আপনার চিঠি। ট্রেন এখুনি একখানা আসছে,