পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চাদের পাহাড় (t বিছানার উপর উঠে ৰসল, ভোর হয়ে গিয়েছে, জানালার ফাক দিয়ে দিনের অালো ঘরের মধ্যে এসেছে। উ:, কি স্বপ্নটাই দেখেছে সে ! ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয় ! বলে তো অনেকে। অনেকদিন আগেকার একটা ভাঙা পুরোনো মন্দির আছে তাদের গায়ে। বারভূইয়ার এক ভুইয়ার জামাই মদন রায় নাকি প্রাচীন দিনে এই মন্দির তৈরী করেন। এখন মদন রায়ের বংশে কেউ নেই। মন্দির ভেঙেচুরে গিয়েছে, অশথ গাছ, বট গাছ গজিয়েছে কানিসে—কিন্তু যেখানে ঠাকুরের বেদী, তার ওপরের খিলেনটা এখনও ঠিক আছে। কোন মূৰ্ত্তি নেই, তবুও শনি-মঙ্গলবারে পুজো হয়, মেয়েরা বেদীতে সি দুর চন্দন মাখিয়ে রেখে যায়, সবাই বলে ঠাকুর বড় জাগ্রত—যে যা মানত করে তাই হয়। শঙ্কর সেদিন স্নান করে উঠে মন্দিরের একটা বটের ঝুরির গায়ে একটা টিল ঝুলিয়ে কি প্রার্থনা জানিয়ে এল। বিকেলে সে গিয়ে অনেকক্ষণ মন্দিরের সামনে দূৰ্ব্বাঘাসের বনে বসে রইল। জায়গাট পাড়ার মধ্যে হলেও বনে ঘেরা, কাছেই একটা পোড়ো বাড়ী ; এদের বাড়ীতে একটা খুন হয়ে গিয়েছিল শঙ্করের শিশুকালে—সেই থেকে বাড়ীর মালিক এ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র বাস করছেন। সবাই বলে জায়গাটায় ভূতের ভয়। এক বড় কেউ এদিকে আসে না। শঙ্করের কিন্তু এই নির্জন মন্দির-প্রাঙ্গণের নিরালা বনে চুপ করে বসে থাকতে বড় ভাল লাগে ! ওর মনে আজ ভোরের স্বপ্নটা দাগ কেটে বসে গিয়েছে। এই বনের মধ্যে বসে শঙ্করের আবার সেই ছবিটা মনে পড়ল—সেই মড়মড় করে বঁাশঝাড় ভাঙছে বুনোহাতীর দল, পাহাড়ের অধিত্যকার নিবিড় বনে পাতালতার ফঁাকে ফঁাকে অনেক উচুতে পৰ্ব্বতের জ্যোৎস্নাপাণ্ডুর তুষারাবৃত শিখরদেশটা যেন কোন স্বপুরাজ্যের সীমা নির্দেশ করছে। কত স্বপ্ন তো সে দেখেছে জীবনে—এত সুস্পষ্ট ছবি স্বপ্নে সে দেখে নি কখনো—এমন গভীর রেখাপাত করে নি কোনো স্বপ্ন তার মনে ।-- সব মিথ্যে। তাকে যেতে হবে পাটের কলে চাকরি করতে। তাই তার ললাট-লিপি কিন্তু মানুষের জীবনে এমন সব অদ্ভূত ঘটনা ঘটে যা উপন্যাসে ঘটাতে গেলে পাঠকেরা বিশ্বাস করতে চাইবে না, হেসেই উড়িয়ে দেবে। শঙ্করের জীবনেও এমন একটি ঘটনা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবে ঘটে গেল। সকালবেলা সে একটু নদীর ধারে বেড়িয়ে এসে সবে বাড়ীতে পা দিয়েছে, এমন সময়ে ওপাড়ার রামেশ্বর মুখুজ্জের স্ত্রী একটুকরো কাগজ নিয়ে এসে তার হাতে দিয়ে বল্লেনবাবা শঙ্কর, আমার জামায়ের খোজ পাওয়া গেছে অনেক দিন পরে। ভদ্ৰেশ্বরে ওদের বাড়ীতে চিঠি দিয়েছে, কাল পিন্ট, সেখান থেকে এসেছে, এই ঠিকানা তারা লিখে দিয়েছে। পড় তো বাবা ?