পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রথম পরিচ্ছেদ


শ্যামপুর গ্রামে সেদিন নন্দোৎসব।

 শ্যামপুরের পাশের গ্রামে আমার মাতুলালয়। চৌধুরী-বাড়ীর উৎসবে আমার মামার বাড়ীর সকলের সঙ্গে আমারও নিমন্ত্রণ ছিল—সুতরাং সেখানে গেলাম।

 গ্রামের ভদ্রলোকেরা একটা শতরঞ্জি পেতে বৈঠকখানায় ব’সে আসর জমিয়েচেন। আমার বড় মামা বিদেশে থাকেন, সম্প্রতি ছুটি নিয়ে দেশে এসেচেন—সবাই মিলে তাঁকে অভ্যর্থনা করলে।

 —এই যে আশুবাবু, সব ভালো তো? নমস্কার!

 —নমস্কার। একরকম চলে যাচ্ছে—আপনাদের সব ভালো?

 —ভালো আর কই? জ্বরজাড়ি সব। ম্যালেরিয়ার সময় এখন, বুঝতেই পারচেন।

 —আপনার সঙ্গে এটি কে?

 —আমার ভাগ্নে, সুশীল। আজই এসেচে—নিয়ে এলাম তাই।

 —বেশ করেচেন, বেশ করেচেন, আনবেনই তো। কি করেন বাবাজি?

 এখানে আমি মামাকে চোখ টিপবার সুবিধে না পেয়ে তাঁর কনিষ্ঠাঙ্গুলি টিপে দিলাম।

 মামা বল্লেন—আপিসে চাকরি করে—কলকাতায়।

 —বেশ, বেশ। এসো বাবাজি, বসো এসে এদিকে।

 মামার আঙুল টিপবার কারণটা বলি। আমি কলকাতার বিখ্যাত প্রাইভেট-ডিটেক্‌টিভ নিবারণ সোমের অধীনে শিক্ষানবিশি করি। কথাটা প্রকাশ করবার ইচ্ছা ছিল না আমার।

 নন্দোৎসব এবং আনুষঙ্গিক ভোজনপর্ব্ব শেষ হলো। আমরা বিদায় নেবার যোগাড় করচি, এমন সময় গ্রামের জনৈক প্রৌঢ় ভদ্রলোক আমার মামাকে ডেকে বল্লেন—কাল আপনাদের পুকুরে মাছ ধরতে যাবার ইচ্ছে আছে। সুবিধে হবে কি?

 —বিলক্ষণ! খুব সুবিধে হবে! আসুন না গাঙ্গুলিমশায়, আমার ওখানেই তা’হলে দুপুরে আহারাদি করবেন কিন্তু।

 —না না, তা আবার কেন? আপনার পুকুরে মাছ ধরতে দিচ্চেন এই কত, আবার খেয়ে বিব্রত করতে যাবো কেন?

 —তাহোলে মাছ ধরাও হবে না বলে দিচ্চি। মাছ ধরতে যাবেন কেবল ওই এক শর্ত্তে।

 গাঙ্গুলিমশায় হেসে রাজী হয়ে গেলেন।

 পরদিন সকালের দিকে হরিশ গাঙ্গুলিমশায় মামার বাড়ীতে এলেন। পল্লীগ্রামের পাকা ঘুঘু মাছ-ধরায়, সঙ্গে ছ’গাছা ছোট-বড় ছিপ, দু’খানা হুইল লাগানো—বাকি সব বিনা হুইলের, টিনে ময়দার চার, কেঁচো, পিঁপড়ের ডিম, তামাক খাওয়ার সরঞ্জাম, আরও কত কি।

 মামাকে হেসে বল্লেন—এলাম বড়বাবু, আপনাকে বিরক্ত করতে। একটা লোক দিয়ে গোটাকতক কঞ্চি কাটিয়ে যদি দেন—কেঁচোর চার লাগাতে হবে।