অগত্যা গাঙ্গুলিমশায় চলে গেলেন। আমায় ব’লে গেলেন—তুমি বাবাজী একদিন আমার ওখানে যেও একটা ছুটিতে। তোমার সঙ্গে আলাপ ক’রে বড় আনন্দ হোলো আজ।
কে জানতো যে তাঁর বাড়ীতে আমাকে অল্পদিনের মধ্যেই যেতে হবে; তবে সম্পূর্ণ অন্য কারণে—অন্য উদ্দেশ্যে।
গাঙ্গুলিমশায়ের সঙ্গে খোশগল্প করার জন্যে নয়!
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
গাঙ্গুলিমশায় চলে গেলে আমি মামাকে বললাম—আপনি মাছ নিলেন না কেন? উনি দুঃখিত হলেন নিশ্চয়।
মামা হেসে বল্লেন—তুমি জানো না, নিলেই দুঃখিত হতেন—উনি বড় কৃপণ।
—তা কথার ভাবে বুঝেচি।
—কি ক’রে বুঝলে?
—অন্য কিছু নয়—বৌ-ছেলেরা কলকাতায় থাকে, উনি থাকেন দেশের বাড়ীতে। একটা চাকর কি রাঁধুনী রাখেন না, হাত পুড়িয়ে এ-বয়সে রেঁধে খেতে হয় তাও স্বীকার। অথচ হাতে দু’পয়সা বেশ আছে।
—আর কিছু লক্ষ্য করলে?
—বড় গল্প বলা স্বভাব! আমার ধারণা, একটু বাড়িয়েও বলেন।
—ঠিক ধরেচো। মাছ নিইনি তার আর-একটা কারণ, উনি মাছ দিয়ে গেলে সব জায়গায় সে গল্প ক’রে বেড়াবেন, আর লোকে ভাববে আমরা কি চামার—পুকুরে মাছ ধরেছে ব’লে ওঁর কাছ থেকে মাছ নিইচি।
—না মামা, এটা আপনার ভুল। এ-কথা ভাববার কারণ কি লোকদের? তা কখনো কেউ ভাবে?
—তা যাই হোক, মোটের ওপর আমি ওটা পছন্দ করিনে।
—উনি একটা বড় ভুল করেন মামাবাবু। টাকার কথা অমন ব’লে বেড়ান কেন?
—ওটা ওঁর স্বভাব। সর্ব্বত্র ওই করবেন। যেখানে বসবেন, সেখানেই টাকার গল্প। ক’রেও আজ আসচেন বহুদিন। দেখাতে চান, হাতে দু’পয়সা আছে।
—আমার মনে হয় ও-স্বভাবটা ভালো নয়—বিশেষ করে এইসব পাড়াগাঁয়ে। একদিন আপনি একটু সাবধান করে দেবেন না?
—সে হবে না। তুমি ওঁকে জানো না। বড্ড একগুঁয়ে। কথা তো শুনবেনই না—আরও ভাববেন, নিশ্চয়ই আমার কোনো মতলব আছে।
আমি সেদিন কলকাতায় চলে এলাম বিকেলের ট্রেনে। আমার ওপর-ওয়ালা নিবারণবাবু লিখেছেন, খুব শীগ্গির আমায় একবার এলাহাবাদে যেতে হবে বিশেষ একটা