পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭২
বিভূতি-রচনাবলী

জরুরী কাজে। অপিসে যেতেই খবর পেলাম, তিনি আর-একটা কাজে দু’দিনের জন্য পাটনা গিয়েচেন চলে—আমার এলাহাবাদ যাবার খরচের টাকা ও একখানা চিঠি রেখে গিয়েচেন তাঁর টেবিলের ড্রয়ারের মধ্যে।

 আমার কাছে তাঁর ড্রয়ারের চাবি থাকে। ড্রয়ার খুলে চিঠিখানা প’ড়ে দেখলাম, বিশেষ কোনো গুরুতর কাজ নয়—এলাহাবাদ গভর্নমেণ্ট থাম্ব-ইম্‌প্রেশন-বুরোতে যেতে হবে, কয়েকটি দাগী বদমাইশের বুড়ো-আঙুলের ছাপের একটা ফটো নিতে।

 মিঃ সোম বুড়ো-আঙুলের ছাপ সম্বন্ধে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি।

 এলাহাবাদের কাজ শেষ করতে আমার লাগলো মাত্র একদিন, আট-দশদিন রয়ে গেলাম তবুও।

 সেদিন সকালবেলা হঠাৎ মিঃ সোমের এক টেলিগ্রাম পেলাম। একটা জরুরী কাজের জন্য আমায় সেইদিনই কলকাতায় ফিরতে লিখেচেন। আমি যেন এলাহাবাদে দেরি না করি।


 ভোরে হাওড়ায় ট্রেন এসে দাঁড়াতেই দেখি, মিঃ সোম প্ল্যাটফর্মেই দাঁড়িয়ে আছেন। আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম, কারণ, এরকম কখনো উনি আসেন না।

 আমায় বল্লেন—সুশীল, তুমি আজই মামার বাড়ী যাও। তোমার মামা কাল দু’খানা আর্জেণ্ট্-টেলিগ্রাম করেছেন তোমায় সেখানে যাবার জন্যে।

 আমি ব্যস্ত হয়ে বললাম—মামার বাড়ী কারো অসুখ? সবাই ভালো আছে তো?

 —সে-সব নয় বলেই মনে হলো। টেলিগ্রামের মধ্যে কারও অসুখের উল্লেখ নেই।

 —কোনো লোক আসে নি সেখান থেকে?

 —না। আমি তার করে দিয়েচি, তুমি এলাহাবাদে গিয়েচো। আজই তোমার ফিরবার তারিখ তাও জানিয়ে দিয়েচি।

 আমি বাসায় না গিয়ে সোজা শেয়ালদ’ স্টেশনে চলে এলাম মামার বাড়ি যাবার জন্যে।

 মিঃ সোম আমার সঙ্গে এলেন শেয়ালদ’ পর্যন্ত—বার-বার ক’রে ব’লে দিলেন, কোনো গুরুতর ঘটনা ঘটলে তাঁকে যেন খবর দিই—তিনি খুব উদ্বিগ্ন হয়ে রইলেন।

 মামার বাড়ি পা দিতেই বড় মামা বল্লেন—এসেছিস সুশীল? যাক্, বড্ড ভাবছিলাম।

 —কি ব্যাপার মামাবাবু? সবাই ভালো তো?

 —এখানকার কিছু ব্যাপার নয়। শ্যামপুরের হরিশ গাঙ্গুলিমশায় খুন হয়েছেন। সেখানে এখুনি যেতে হবে।

 আমি ভীত ও বিস্মিত হয়ে বল্লাম—গাঙ্গুলিমশায়! সেদিন যিনি মাছ ধরে গেলেন! খুন হয়েচেন?

 —হ্যাঁ, চলো একবার সেখানে। শীগ্‌গির স্নানাহার করে নাও। কারণ, সারাদিনই হয়তো কাটবে সেখানে।