বেলা দুটোর সময় শ্যামপুরে এসে পৌঁছুলাম। ছোট্ট গ্রাম। কখনো সেখানে কারও একটা ঘটি চুরি হয়নি—সেখানে খুন হয়ে গিয়েচে, সুতরাং গ্রামের লোকে দস্তুরমত ভয় পেয়ে গেছে। গ্রামের মাঝখানে বারোয়ারি-পূজা-মণ্ডপে জড়ো হয়ে সেই কথারই আলোচনা করছে সবাই।
আমার মামা এখানে এর পূর্ব্বে অনেকবার এসেছিলেন এই ঘটনা উপলক্ষে, তা সকলের কথাবার্ত্তা থেকে বোঝা গেল। আমার কথা বিশেষ কেউ জিগ্যেস করলে না বা আমার সম্বন্ধে কেউ কোনো আগ্রহও দেখালে না। কেউ জানে না, আমি প্রাইভেট-ডিটেক্টিভ মিঃ সোমের শিক্ষানবিশ ছাত্র—এ-সব অজ পাড়াগাঁয়ে ওঁর নামই কেউ শোনে নি—আমাকে সেখানে কে চিনবে?
মামা জিগ্যেস করলেন—লাশ নিয়ে গিয়েছে?
ওরা বল্লে—আজ সকালে নিয়ে গেল। পুলিস এসেছিল।
আমি ওদের বল্লাম—ব্যাপার কি ভাবে ঘটলো? আজ হোলো শনিবার। কবে তিনি খুন হয়েচেন?
গ্রামের লোকে যেরকম বল্লে তাতে মনে হোলো, সে-কথা কেউ জানে না। নানা লোক নানা কথা বলতে লাগলো। পুলিসের কাছেও এরা এইরকমই ব’লে ব্যাপারটাকে রীতিমত গোলমেলে ক’রে তুলেচে।
আমি আড়ালে মামাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললাম—আপনি কি মনে ক’রে এখানে এনেচেন আমায়?
মামা বললেন—তুমি সব ব্যাপার শুনে নাও, চলো, অনেক কথা আছে। এই খুনের রহস্য তোমায় আবিষ্কার করতে হবে—তবে বুঝবো মিঃ সোমের কাছে তোমায় শিক্ষানবিশ করতে দিয়ে আমি ভুল করিনি। এখানে কেউ জানে না তুমি কি কাজ করো—সে তোমার একটা সুবিধে।
—সুবিধেও বটে, আবার অসুবিধেও বটে।
—কেন?
—বাইরের বাজে লোককে কেউ আগ্রহ ক’রে কিছু বলবে না। গোলমাল একটু থামলে একজন ভালো লোককে বেছে নিয়ে সব ঘটনা খুঁটিয়ে জানতে হবে। গাঙ্গুলিমশায়ের ছেলে কোথায়?
—সে লাশের সঙ্গে মহকুমায় গিয়েছে। সেখানে লাশ কাটাকুটি করবে ডাক্তারে, তারপর দাহকার্য্য করে ফিরবে।
—লাশ দেখলে বড্ড সুবিধে হোতো। সেটা আর হোলো না।
—সেইজন্যেই তো বলছি, তুমি কেমন কাজ শিখেচো, এটা তোমার পরীক্ষা। এতে যদি পাশ করো তবে বুঝবো তুমি মিঃ সোমের উপযুক্ত ছাত্র। নয়তো তোমাকে আমি আর ওখানে রাখবো না—এ আমার এক-কথা জেনো।