তৃতীয় পরিচ্ছেদ
তারপর গাঙ্গুলিমশায়ের বাড়ী গেলাম।
গিয়ে দেখি, যেখানটাতে গাঙ্গুলিমশায়ের বাড়ী—তার দু’দিকে ঘন-জঙ্গল। একদিকে দূরে একটা গ্রাম্য কাঁচা রাস্তা, একদিকে একটি হচ্ছে বাড়ী।
আমি গাঙ্গুলিমশায়ের ছেলের কথা জিগ্যেস ক’রে জানলাম, সে এখনও মহকুমা থেকে ফেরে নি। তবে একটি প্রৌঢ়ার সঙ্গে দেখা হলো—শুনলাম তিনি গাঙ্গুলিমশায়ের আত্মীয়া।
তাঁকে জিগ্যেস করলাম—গাঙ্গুলিমশায়কে শেষ দেখেছিলেন কবে?
—বুধবার।
—কখন?
—বিকেল পাঁচটার সময়।
—কিভাবে দেখেছিলেন?
—সেদিন হাটবার ছিল—উনি হাটে যাবার আগে আমার কাছে পয়সা চেয়েছিলেন।
—কিসের পয়সা?
—সুদের পয়সা। আমি ওঁর কাছে দুটো টাকা ধার নিয়েছিলাম ও-মাসে।
—আপনার পর আর কেউ দেখেছিল?
গাঙ্গুলিমশায়ের বাড়ীর ঠিক পশ্চিম গায়ে যে বাড়ী, সেদিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে প্রৌঢ়া বললেন—ওই বাড়ীর রায়-পিসি আমার পরও তাঁকে দেখেছিলেন।
আমি বৃদ্ধা রায়-পিসির বাড়ী গিয়ে তাঁকে প্রণাম করতেই বৃদ্ধা আমায় আশীর্বাদ করে একখানা পিঁড়ি বার ক’রে দিয়ে বললেন—বোসো বাবা।
আমি সংক্ষেপে আমার পরিচয় দিয়ে বললাম—আপনি একা থাকেন নাকি এ বাড়ীতে।
—হ্যাঁ বাবা। আমার তো কেউ নেই—মেয়ে-জামাই আছে, তারা দেখাশুনো করে।
—মেয়ে-জামাই এখানে থাকেন?
—এখানেও থাকে, আবার তাদের দেশ এই এখান থেকে চার ক্রোশ দূর সাধুহাটি গাঁয়ে, সেখানেও থাকে।
—গাঙ্গুলিমশায়কে আপনি বুধবার কখন দেখেন?
—রাত্তিরে যখন উনি হাট থেকে ফিরলেন—তখন আমি বাইরের রোয়াকে বসে জপ করছিলাম। তারপর আর চোখে না দেখলেও ওঁর গলার আওয়াজ শুনেচি রাত দশটা পর্য্যন্ত—উনি ওঁর রান্নাঘরে রাঁধছিলেন আলো জ্বেলে, আমি যখন শুতে যাই তখন পর্য্যন্ত।
—তখন রাত কত হবে?
—তা কি বাবা জানি? আমরা পাড়াগাঁয়ের লোক—ঘড়ি তো নেই বাড়ীতে। তবে