—কি দেখা গেল?
—দেখা গেল, তিনি ঘরের মধ্যে মরে প’ড়ে আছেন! মাথায় ভারী জিনিস দিয়ে মারার দাগ। মেজে খুঁড়ে রাশীকৃত মাটি বার করা, ঘরের বাক্স-প্যাঁট্রা সব ভাঙা, ডালা খোলা—সব তচ্নচ্ করেচে জিনিসপত্র। . . . তারপর ওঁর ছেলেদের টেলিগ্রাম করা হোলো।
—এ-ছাড়া আর কিছু আপনারা জানেন না?
—না বাবা, আর আমরা কিছু জানিনে।
গাঙ্গুলিমশায়ের প্রতিবেশিনী সেই বৃদ্ধাকে জিগ্যেস করলাম—রাত্রে কোনোরকম শব্দ শুনেছিলেন? গাঙ্গুলিমশায়ের বাড়ী থেকে?
—কিছু না। অনেক রাত্তিরে আমি যখন শুতে যাই—তখনও ওঁর রান্নাঘরে আলো জ্বলতে দেখেচি। আমি ভাবলাম, গাঙ্গুলিমশায় আজ এখনও দেখি রান্না করচেন!
—কেন, এরকম ভাবলেন কেন?
—এত রাত পর্য্যন্ত তো উনি রান্নাঘরে থাকেন না; সকালরাত্তিরেই খেয়ে শুয়ে পড়েন। বিশেষ ক’রে সেদিন গিয়েছে ঘোর অন্ধকার রাত্তির—অমাবস্যা, তার ওপর টিপ্-টিপ্ বৃষ্টি পড়তে শুরু হয়েছিল সন্ধ্যে থেকেই।
—তখন তো আর আপনি জানতেন না যে, উনি হাট থেকে মাংস কিনে এনেচেন?
—না, এমন কিছুই জানিনে। . . . হ্যাঁ বাবা, . . . যখন এত ক’রে জিগ্যেস করচো, তখন একটা কথা আমার এখন মনে হচ্চে—
—কি, কি, বলুন?
—উনি ভাত খাওয়ার পরে রোজ রাত্তিরে কুকুর ডেকে এঁটো পাতা, কি পাতের ভাত তাদের দিতেন, রোজ-রোজ ওঁর গলার ডাক শোনা যেত। সেদিন আমি আর তা শুনি নি।
—ঘুমিয়ে পড়েছিলেন হয়তো।
—না বাবা, বুড়ো-মানুষ—ঘুম সহজে আসে না। চুপ ক’রে শুয়ে থাকি বিছানায়। সেদিন আর ওঁর কুকুরকে ডাক দেওয়ার আওয়াজ আমার কানেই যায়নি।
ভালো ক’রে জেরা করার ফল অনেক সময় বড় চমৎকার হয়। মিঃ সোম প্রায়ই বলেন—লোককে বারবার করে প্রশ্ন জিগ্যেস করবে। যা হয়তো তার মনে নেই, বা, খুঁটিনাটির ওপর সে তত জোর দেয় নি—তোমার জেরায় তা তারও মনে পড়বে। সত্য বার হয়ে আসে অনেক সময় ভালো জেরার গুণে।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
সেদিনই আমার সঙ্গে গাঙ্গুলিমশায়ের ছেলে শ্রীগোপালের দেখা হোলো। সে তার পিতার দাহকার্য্য শেষ ক’রে ফিরে আসছে কাছাগলায়।