পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মিস্‌মিদের কবচ
১৭৭

 আমি তাকে আড়ালে ডেকে নিজের প্রকৃত পরিচয় দিলাম। শ্রীগোপালের চোখ দিয়ে দর্‌দর্ করে জল পড়তে লাগলো। সে আমাকে সব-রকমের সাহায্য করবে প্রতিশ্রুতি দিলে।

 আমি বল্লাম—কারো ওপর আপনার সন্দেহ হয়?

 —কার কথা বলব বলুন। বাবার একটা দোষ ছিল, টাকার কথা জাহির ক’রে বেড়াতেন সবার কাছে। কত জায়গায় এ-সব কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে কে এ-কাজ করলে কি ক’রে বলি?

 —আচ্ছা, কথা একটা জিগ্যেস করবো—কিছু মনে করবেন না। আপনার বাবার কত টাকা ছিল জানেন?

 —বাবা কখনো আমাদের বলতেন না। তবে, আন্দাজ, দু’হাজারের বেশি নগদ টাকা ছিল না।

 —সে টাকা কোথায় থাকতো?

 —সেটা জানতাম। ঘরের মেজেতে বাবা পুঁতে রাখতেন—কতবার বলেছি, টাকা ব্যাঙ্কে রাখুন। সেকেলে লোক, ব্যাঙ্ক বুঝতেন না।

 —গাঙ্গুলিমশায়ের মৃত্যুর পর বাড়ী এসে আপনি মেজে খুঁড়ে কিছু পেয়েছিলেন?

 —মেজে তো খুঁড়ে রেখেছিল যারা খুন করেচে তারাই। আমি এক পয়সাও পাই নি—তবে একটা কথা বলি—দু’হাজার টাকার সব টাকাই তো মেঝেতে পোঁতা ছিল না—বাবা টাকা ধার দিতেন কিনা! কিছু টাকা লোকজনকে ধার দেওয়া ছিল।

 —কত টাকা আন্দাজ?

 —সেদিক থেকেও মজা শুনুন, বাবার খাতাপত্র সব ওই সঙ্গে চুরি হয়ে গিয়েচে। খাতা না দেখলে বলা যাবে না কত টাকা ধার দেওয়া ছিল।

 —খাতাপত্র নিজেই লিখতেন?

 —তার মধ্যেও গোলমাল আছে। আগে নিজেই লিখতেন, ইদানীং চোখে দেখতে পেতেন না বলে একে-ওকে ধ’রে লিখিয়ে নিতেন।

 —কাকে-কাকে দিয়ে লিখিয়ে নিতেন জানেন?

 —বেশির ভাগ লেখাতেন সদ্‌গোপ-বাড়ীর ননী ঘোষকে দিয়ে। সে জমিদারী-সেরেস্তায় কাজ করে—তার হাতের লেখাও ভালো। বাবার কথা সে খুব শুনতো।

 —ননী ঘোষের বয়েস কত?

 —ত্রিশ-বত্রিশ হবে।

 —ননী ঘোষ লোক কেমন? তার ওপর সন্দেহ হয়।

 —মুশ্‌কিল হয়েচে, বাবা তো একজনকে দিয়ে লেখাতেন না! যখন যাকে পেতেন, তখন তাকেই ধ’রে লিখিয়ে নিতেন যে! স্কুলের ছেলে গণেশ ব’লে আছে, ওই মুখুজ্যে বাড়ি থেকে পড়ে—তাকেও দেখি একদিন ডেকে এনেচেন। শুধু ননী ঘোষের ওপর সন্দেহ ক’রে কি করবো?