কিন্তু তাও তো উচিত নয়!
মামা যখন বলেচেন, এটা যদি আমার পরীক্ষা হয়, তবে পরীক্ষার হলে যেমন ছেলেরা কাউকে কিছু জিগ্যেস ক’রে নেয় না—আমায় তাই করতে হবে।
যদি এর কিনারা করতে পারি, তবে মামা বলেচেন, আমাকে এ-লাইনে রাখবেন—নয়তো মিঃ সোমের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেবেন, নিয়ে হয়তো কোনো আর্টিস্টের কাছে রেখে ছবি আঁকতে শেখাবেন, বা, বড় দরজির কাছে রেখে শার্ট তৈরী, পাঞ্জাবী তৈরী শেখাবেন।
তবে শিক্ষানবিশের প্রথম পরীক্ষা-হিসেবে পরীক্ষা যে বেশ কঠিন, এতে কোন ভুল নেই।…
—ব’সে-ব’সে আরও অনেক কথা ভাবলুম:
…হিসেবের খাতা যে লিখতো, সে নিশ্চয়ই জানতো ঘরে কত টাকা মজুত, বাইরে কত টাকা ছড়ানো। তার পক্ষে জিনিসটা জানা যত সহজ, অপরের পক্ষে তত সহজ নয়।
এ-বিষয়েও একটা গোলমাল আছে। গাঙ্গুলিমশায় টাকার গর্ব্ব মুখে ক’রে বেড়াতেন যেখানে-সেখানে। কত লোক শুনেচে—কত লোক হয়তো জানতো।
একটা কথা আমার হঠাৎ মনে এল।
কিন্তু, কাকে কথাটা জিগ্যেস করি?
ননী ঘোষের বাড়ি গিয়ে ননী ঘোষের সঙ্গে দেখা করা একবার বিশেষ দরকার। তাকেই এ-কথা জিগ্যেস করতে হবে। সে নাও বলতে পারে অবিশ্যি—তবুও একবার জিগ্যেস করতে দোষ নেই।…
ননী ঘোষ বাড়িতেই ছিল। আমায় সে চেনে না, একটু তাচ্ছিল্য ও ব্যস্ততার সঙ্গে বললে—কি দরকার বাবু? বাড়ী কোথায় আপনার?
আমি বললাম—তোমার সঙ্গে দরকারী কথা আছে। ঠিক উত্তর দাও। মিথ্যে বল্লে বিপদে পড়ে যাবে।
ননীর মুখ শুকিয়ে গেল। দেখলাম সে ভয় পেয়েচে। বুঝেচে যে, আমি গাঙ্গুলিমশায়ের খুন-সম্পর্কে তদন্ত করতে এসেছি—নিশ্চয়ই পুলিসের সাদা পোশাক-পরা ডিটেক্টিভ।
সে এবার বিনয়ে কাঁচুমাচু হয়ে বললে—বাবু, যা জিগ্যেস করেন, করুন।
—গাঙ্গুলিমশায়ের খাতা তুমি লিখতে?
ননী ইতস্তত করে বললে—তা ইয়ে—আমিও লিখিচি দু’ একদিন—আর ওই গণেশ ব’লে একটা স্কুলের ছেলে আছে, তাকে দিয়েও—
আমি ধমক দিয়ে বললাম—স্কুলের ছেলের কথা হচ্ছে না—তুমি লিখতে কিনা?
ননী ভয়ে-ভয়ে বললে—আজ্ঞে, তা লেখতাম।
—কতদিন লিখচো? মিথ্যে কথা বললেই ধরা পড়ে যাবে। ঠিক বলবে।
—প্রায়ই লেখতাম। দু’বছর ধরে লিখচি।