পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮০
বিভূতি-রচনাবলী

 —আর কে লিখতো?

 —ওই যে স্কুলের ছেলে গণেশ—

 —তার কথা ছেড়ে দাও, তার বয়েস কত?

 —পনের-ষোলো হবে।

 —আর কে লিখতো?

 —আর, সরফরাজ তরফদার লিখতো, সে এখন—

 —সরফরাজ তরফদারের বয়েস কত? কি করে?

 —সে এখন মারা গিয়েছে।

 —বাদ দাও সে-কথা। কতদিন মারা গিয়েচে?

 —দু’বছর হবে।

 —এইবার একটা কথা জিগ্যেস করি—গাঙ্গুলিমশায়ের কত টাকা বাইরে ছিল জানো?

 —প্রায় দু’হাজার টাকা।

 —মিথ্যে বোলো না। খাতা পুলিসের হাতে পড়েচে—মিথ্যে বললে মারা যাবে।

 —না বাবু, মিথ্যে বলিনি। দু’হাজার হবে।

 —ঘরে মজুত কত ছিল?

 —তা জানিনে!

 —আবার বাজে কথা? ঠিক বলো।

 —বাবু, আমায় মেরেই ফেলুন আর যাই করুন—মজুত টাকা কত তা আমি কি ক’রে বলবো? গাঙ্গুলিমশায় আমায় সে টাকা দেখায় নি তো? খাতায় মজুত-তবিল লেখা থাকতো না।

 —একটা আন্দাজ তো আছে? আন্দাজ কি ছিল ব’লে তোমার মনে হয়?

 —আন্দাজ আর সাত-আট-শো টাকা।

 —কি ক’রে আন্দাজ করলে?

 —ওঁর মুখের কথা থেকে তাই আন্দাজ হোতো।

 —গাঙ্গুলিমশায়ের মৃত্যুর কতদিন আগে তুমি শেষ খাতা লিখেছিলে?

 —প্রায় দু’মাস আগে। দু’মাসের মধ্যে আমি খাতা লিখিনি—আপনার পায়ে হাত দিয়ে বলচি। তাছাড়া খাতা বেরুলে হাতের লেখা দেখেই তা আপনি বুঝবেন।

 —কোনো মোটা টাকা কি তাঁর মরণের আগে কোনো খাতকে শোধ করেছিল ব’লে তুমি মনে কর?

 —না বাবু! ঊর্দ্ধ্বসংখ্যা ত্রিশ টাকার বেশি তিনি কাউকে ধার দিতেন না, সেটা খুব ভালো করেই জানি। মোটা টাকা মানে, দু’শো একশো টাকা কাউকে তিনি কখনো দেননি।

 —এমন তো হতে পারে, পাঁচজন খাতকে ত্রিশ টাকা ক’রে শোধ দিয়ে গেল একদিনে? দেড়শো টাকা হোলো?