স্থান তন্নতন্ন ক’রে দেখলাম। সাত-আটদিনের পূর্ব্বের ঘটনা, পায়ের চিহ্ন যদি কোথাও থাকতে পারে—তবে এখানেই তা থাকা সম্ভব।
কিন্তু জায়গাটা দেখে হতাশ হোতে হোলো।
জমিটা মুথো-ঘাসে ঢাকা—বর্ষায় সে ঘাস বেড়ে হাতখানেক লম্বা হয়েছে। তার ওপর পায়ের দাগ থাকা সম্ভবপর নয়।
আমার মনে হোলো, খুনী রাত্রে এসেছিল ঠিক এই পথে। সামনের পথ লোকালয়ের মধ্যে দিয়ে—কখনই সে-পথে আসতে সাহস করে নি।
অনেকক্ষণ তন্নতন্ন ক’রে খুঁজে দেখেও সন্দেহজনক কোনো জিনিস চোখে পড়লো না—কেবল এক জায়গায় একটা সেওড়াগাছের ডাল ভাঙা অবস্থায় দেখে আমি গাঙ্গুলিমশায়ের ছেলেকে বললাম—এই ডালটা ভেঙে কে দাঁতন করেছিল, আপনি?
গাঙ্গুলিমশায়ের ছেলে আশ্চর্য হয়ে বল্লে—না, আমি এ-জঙ্গলে দাঁতন-কাঠি ভাঙতে আসবো কেন?
—তাই জিগ্যেস করচি।
—আপনি কি ক’রে জানলেন, ডাল ভেঙে কেউ দাঁতন করেচে?
—ভালো করে চেয়ে দেখুন। একরকম ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মুচ্ড়ে ভেঙেচে ডালটা—তাছাড়া এতগুলো সেওড়া-ডালের মধ্যে একটিমাত্র ডাল ভাঙা। মানুষের হাতে ভাঙা বেশ বোঝা যাচ্চে। দাঁতনকাঠি সংগ্রহ ছাড়া অন্য কি উদ্দেশ্যে এভাবে একটা ডাল কেউ ভাঙতে পারে?
—আপনার দেখবার চোখ তো অদ্ভুত! আমার তো মশাই ও চোখেই পড়তো না!
—আচ্ছা, দেখে বলুন তো, কত দিন আগে এ-ডালটা ভাঙা হয়েচে?
—অনেক দিন আগে।
—খুব বেশি দিন আগে না। মোচ্ড়ানো-অংশের গোড়াটা দেখে মনে হয়, ছ’সাতদিন আগে। এর চেয়েও নিখুঁতভাবে বলা যায়। ঐ অংশের সেলুলোজ্ অণুবীক্ষণ দিয়ে পরীক্ষা করলে ধরা পড়বে। আমি এই গাছের ভাঙা-ডালটা কেটে নিয়ে যাবো, একটা দা’ আনুন তো দয়া ক’রে?
গাঙ্গুলিমশায়ের ছেলের মুখ দেখে বুঝলাম সে বেশ একটু অবাক হয়েচে। ভাঙা-দাঁতনকাঠি নিয়ে আমার এত মাথাব্যথার কারণ কি বুঝতে পারচে না।
সে পিছন ফিরে দা’ আনতে যেতে উদ্যত হোলো—কিন্তু দু’চার পা গিয়েই থমকে দাঁড়িয়ে ঘাসের মধ্যে থেকে কি একটা জিনিস হাতে তুলে নিয়ে বল্লে—এটা কি?
আমি তার হাত থেকে জিনিসটা নিয়ে দেখলাম, সেটা একটা কাঠের ছোট্ট গোলাকৃতি পাত। ভালো করে আলোয় নিয়ে এসে পরীক্ষা ক’রে দেখলাম, পাতের গায়ে একটা খোদাই কাজ। একটা ফুল, ফুলটার নীচে একটা শেয়ালের মত জানোয়ার।
শ্রীগোপাল বল্লে—এটা কি বলুন তো?
আমি বুঝতে পারলাম না, কি জিনিস এটা হতে পারে তাও আন্দাজ করতে পারলাম না।