পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৪
বিভূতি-রচনাবলী

 দারোগাবাবুর হাতে কাঠের পাতটা দিয়ে বল্লাম—এ জিনিসটা দেখুন।

 দারোগাবাবু সেটা হাতে নিয়ে বল্লেন—কি এটা?

 —কি জিনিসটা তা ঠিক বলতে পারবো না। তবে গাঙ্গুলিমশায়ের বাড়ীর পেছনের জঙ্গলে এটা কুড়িয়ে পেয়েচি। আর-একটা জিনিস দেখুন।

 ব’লে সেওড়াডালের গোড়াটা তাঁর হাতে দিতেই তিনি অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে চেয়ে বল্লেন—এ তো একটা শুকনো গাছের ডাল—এতে কি হবে?

 —ওতেই একটা মস্ত সন্ধান দিয়েচে। জানেন? যে খুন করেচে, সে ভোর রাত পর্য্যন্ত গাঙ্গুলিমশায়ের বাড়ী ছাড়ে নি। ভোরের দিকে রাত পোহাতে দেরি নেই দেখে সরে পড়েচে। যাবার সময় অভ্যাসের বশে সেওড়াডালের দাঁতন করেচে।

 দারোগামশায় হো-হো ক’রে হেসে উঠে বল্লেন—আপনারা যে দেখচি মশায়, স্বপ্নরাজ্যে বাস করেন! এত কল্পনা ক’রে পুলিসের কাজ চলে? কোথায় একটা দাঁতনকাঠির ভাঙা গোড়া!

 —আমি জানি আমার গুরু মিঃ সোম একবার একটা ভাঙা দেশলাইয়ের কাঠিকে সূত্র ধ’রে আসামী পাক্‌ড়েছিলেন।

 দারোগাবাবু হাসতে-হাসতে বল্লেন—বেশ, আপনিও ধরুন না দাঁতনকাঠি থেকে, আমার আপত্তি কি?

 —যদি আমি এটাকে এত প্রয়োজনীয় মনে না করতাম, তবে এটা এতদিন সঙ্গে নিয়ে বেড়াই? যে দুটো জিনিস পেয়েচি, তাদের মধ্যে পরস্পর সম্বন্ধ আছে—এও আমার বিশ্বাস।

 —কি রকম?

 —যে দাঁতনকাঠি ভেঙেচে—তার বা তাদের দলের লোকের এই কাঠের পাতখানাও!

 —পাতখানা কি?

 —সে-কথা পরে বলবো। আর-একটা সন্ধান দিয়েছে এই দাঁতনকাঠিটা।

 —কি?

 —সেটা এই: দোষীর বা দোষীর দলের কারো দাঁতন করবার অভ্যেস আছে। দাঁতন করবার যার প্রতিদিনের অভ্যেস নেই—সে এরকম দাঁতন নিপুণভাবে মোচড় দিয়ে ভাঙতে জানবে না। এবং সম্ভবত সে বাঙালী এবং পল্লীগ্রামবাসী। হিন্দুস্থানীরা দাঁতন করে, কিন্তু দেখবেন, তারা সেওড়াডালের দাঁতন করতে জানে না—তারা নিম, বা বাব্‌লাগাছের দাঁতনকাঠি ব্যবহার করে সাধারণত। এ লোকটা বাঙালী এ-বিষয়ে ভুল নেই।


 সেইদিনই আমি কলকাতায় মিঃ সোমের সঙ্গে দেখা করলাম। সেওড়াডালের গোড়াটা আমি তাঁকে দেখাই নি—কাঠের পাতটা তাঁর হাতে দিয়ে বল্লাম—এটা কি ব’লে আপনি মনে করেন?