তিনি জিনিসটা দেখে বল্লেন—এ তুমি কোথায় পেলে?
—সে-কথা আপনাকে এখন বলবো না, ক্ষমা করবেন।
—এটা আসামে মিস্মি-জাতির মধ্যে প্রচলিত রক্ষাকবচ। দেখবে? আমার কাছে আছে।
মিঃ সোমের বাড়ীতে নানা দেশের অদ্ভুত জিনিসের একটা প্রাইভেট মিউজিয়াম-মত আছে। তিনি তাঁর সংগৃহীত দ্রব্যগুলির মধ্যে থেকে সেই রকম একটা কাঠের পাত এনে আমার হাতে দিলেন।
আমি বললাম—আপনারটা একটু বড়। কিন্তু চিহ্ন একই—ফুল আর শেয়াল।
—এটা ফুল নয়, নক্ষত্র—দেবতার প্রতীক, আর নীচে উপাসনাকারী মানুষের প্রতীক—পশু!
—কোন্ দেশের জিনিস বল্লেন?
—নাগা পর্ব্বতের নানা স্থানে এ-কবচ প্রচলিত—বিশেষ ক’রে ডিব্রু-সদিয়া অঞ্চলে।
আমি তাঁর হাত থেকে আমার পাতটা নিয়ে তারপর বল্লাম—এই সেওড়াডালটা ক’দিনের ভাঙা বলে মনে হয়?
তিনি বল্লেন—ভালো ক’রে দেখে দেবো? আচ্ছা, বোসো।
সেটা নিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে একটু পরে ফিরে এসে বল্লেন—আট ন’দিন আগে ভাঙা।
আমি তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম নিজের বাসায়।
সপ্তম পরিচ্ছেদ
আমার মনে একটা বিশ্বাস ক্রমশ দৃঢ়তর হয়ে উঠচে। গাঙ্গুলিমশায়কে খুন করতে এবং খুনের পরে তাঁর ঘরের মধ্যে খুঁড়ে দেখতে খুনীর লেগেছিল সারারাত। যুক্তির দিক থেকে হয়তো এর অনেক দোষ বার করা যাবে—কিন্তু আমি অনেক সময় অনুমানের ওপর নির্ভর ক’রে অগ্রসর হয়ে সত্যের সন্ধান পেয়েছি।
কিন্তু ননী ঘোষকে আমি এখনও রেহাই দিই নি। শ্যামপুরে ফিরেই আমি আবার তার সঙ্গে দেখা করলাম। আমায় দেখে ননীর মুখ শুকিয়ে গেল—তাও আমার চোখ এড়ালো না।
বল্লাম—শোনো ননী, আবার এলাম তোমায় জ্বালাতে—কতকগুলো কথা জিগ্যেস করবো।
—আজ্ঞে, বলুন!
—গাঙ্গুলিমশায় যেদিন খুন হন, সে-রাত্রে তুমি কোথায় ছিলে?
ননীর মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল। বল্লে, আজ্ঞে…
—বলো কোথায় ছিলে। বাড়ী ছিলে না—