—আজ্ঞে না। সামটায় শ্বশুরবাড়ী যেতে-যেতে সেদিন দেবনাথপুরের হাটতলায় রাত কাটাই।
—কেউ দেখেচে তোমায়?
—ননী বল্লে—আজ্ঞে, তা যদিও দেখে নি—
—কেন দেখে নি।
—রাত হয়ে গেল দেখে ওখানে আশ্রয় নিয়েছিলাম। তখন কেউ সেখানে ছিল না।
—খেয়াঘাট পার হওনি দেবনাথপুরে?
—হ্যাঁ বাবু। অনেক লোক একসঙ্গে পার হয়েছিল। আমায় তো পাটনি চিনে রাখে নি!
—বাড়ী এসেছিলে কবে?
—শনিবার দুপুরবেলা।
—গাঙ্গুলিমশায় খুন হয়েচেন কার মুখে শুনলে?
—আজ্ঞে, গাঁয়ে ঢুকেই মাঠে কাপালিদের মুখে শুনি।
—কার মুখে শুনেছিলে তার নাম বলো।
—আজ্ঞে, ঠিক মনে হচ্ছে না, বোধ হয় হীরু কাপালি—
—তার কাছে গিয়ে প্রমাণ ক’রে দিতে পারবে?
ননী ইতস্তত ক’রে বল্লে—আজ্ঞে, ঠিক তো মনে নেই; যদি হীরু না হয়?
ননীর কথায় আমার সন্দেহ আরো বেশী হোলো। সে-রাত্রে ও ঘরে ছিল না, অথচ কোথায় ছিল তা পরিষ্কার প্রমাণও দিতে পারছে না। গোপনে সন্ধান নিয়ে আরও জানলাম, ননী সম্প্রতি কলকাতায় গিয়েছিল। আজ দু’দিন হলো এসেছে। ননীকে জিগ্যেস করে কোনো লাভ নেই, ও সত্যি কথা বলবে না। একটা কিছু কাণ্ড ও ঘটাচ্চে নাকি তলে-তলে? কিছু বোঝা যাচ্চে না!
দু’দিন পরে শ্রীগোপাল এসে আমায় খবর দিলে, গ্রামের মহীন্ সেকরাকে সে ডেকে এনেচে—আমার সঙ্গে দেখা করবে, বিশেষ কাজ আছে।
মহীন্ সেকরার বয়স প্রায় পঞ্চাশের ওপর। নিতান্ত ভালোমানুষ গ্রাম্য-সেকরা, ঘোরপেঁচ জানে না বলেই মনে হোলো।
শ্রীগোপালকে বললাম—একে কেন এনেচ?
—এ কি বলচে শুনুন।
—কি মহীন্?
—বাবু, ননী ঘোষ আমার কাছে এগারো ভরি সোনার তাবিজ আর হার তৈরি ক’রে নিয়েচে—আজ তিন-চারদিন আগে।
—দাম কত?
—সাতাশ টাকা ক’রে ভরি, হিসেব করুন।