অষ্টম পরিচ্ছেদ
শীতল পোদ্দার টাকা বার ক’রে নিয়ে এল একট থলির মধ্যে থেকে। বল্লে—সেদিনকার তহবিল আলাদা করা ছিল। সোনা বিক্রির তহবিল আমাদের আলাদা থাকে, কারণ, এই নিয়ে মহাজনের সোনা কিনতে যেতে হয়। টাকা হাতে নিয়ে দেখবার আগেই শীতল একটা কথা বল্লে—যা আমার কাছে আশ্চর্য ব’লে মনে হোলো। সে বল্লে—বাবু, এগুলো পুরোনো টাকা, পোঁতা-টোতা ছিল ব’লে মনে হয়, এ চুরির টাকা নয়।
আমি বললাম—তুমি কি ক’রে জানলে এ পুরোনো টাকা?
—দেখুন আপনিও হাতে নিয়ে! পুরোনো কলঙ্ক-ধরা রুপো দেখলে আমাদের চোখে কি চিনতে বাকি থাকে বাবু! এই নিয়ে কারবার করচি যখন!
—কতদিনের পুরোনো টাকা এ?
—বিশ-পঁচিশ বছরের।
টাকাগুলো হাতে নিয়ে পরীক্ষা ক’রে দেখলাম, বিশ বৎসরের পরের কোনো সালের অঙ্ক টাকার গায়ে লেখা নেই। বল্লাম—মাটিতে পোঁতা টাকা ব’লে ঠিক মনে হচ্চে?
—নিশ্চয়ই বাবু। পেতলের হাঁড়িতে পোঁতা ছিল। পেতলের কলঙ্ক লেগেচে টাকার গায়ে।
—আচ্ছা, তুমি এ-টাকা আলাদা ক’রে রেখে দাও। আমি পুলিস নই, কিন্তু পুলিস শীগ্গির এসে এ-টাকা চাইবে মনে থাকে যেন।
শীতল পোদ্দার আমার সামনে হাতজোড় ক’রে দাঁড়িয়ে অনুনয়ের সুরে বল্লে—দোহাই বাবু, দেখবেন, যেন আমি এর মধ্যে জড়িয়ে না পড়ি। কোনো দোষে দুষী নই বাবু, মহীন্ আমার পুরোনো খাতক আর খদ্দের, ও কোথা থেকে টাকা এনেচে তা কেমন ক’রে জানবো বাবু, বলুন?
মহীন্কে নিয়ে দোকানের বাইরে চলে এলাম। দেখি, ও ভয়ে কেমন বিবর্ণ হয়ে উঠেচে। বল্লাম—কি মহীন্ তোমার ভয় কি? তুমি গাঙ্গুলিমশায়কে খুন করো নি তো?
মহীন্ বল্লে—খুন? গাঙ্গুলিমশায়কে? কি যে বলেন বাবু!
দেখলাম ওর সর্ব্বশরীর যেন থরথর ক’রে কাঁপচে।
কেন, ওর এত ভয় হোলো কিসের জন্যে?
আমরা ডিটেক্টিভ, আসামী ধরতে বেরিয়ে কাউকে সাধু ব’লে ভাবা আমাদের স্বভাব নয়। মিঃ সোম আমার শিক্ষাগুরু—তাঁর একটি মূল্যবান্ উপদেশ হচ্ছে, যে-বাড়ীতে খুন হয়েচে বা চুরি হয়েচে—সে বাড়ীর প্রত্যেককেই ভাববে খুনী ও চোর। প্রত্যেককে সন্দেহের চোখে দেখবে, তবে খুনের কিনারা করতে পারবে—নতুবা পদে-পদে ঠকতে হবে।
ননী ঘোষ তো আছেই এর মধ্যে, এ-সন্দেহ আমার এখন বদ্ধমূল হোলো। বিশেষ