ক’রে টাকা দেখবার পরে আদৌ সে-সন্দেহ না থাকবারই কথা।
কিন্তু এখন আবার একটা নতুন সন্দেহ এসে উপস্থিত হোলো।
এই মহীন্ সেকরার সঙ্গে খুনের কি কোনো সম্পর্ক আছে?
কথাটা ট্রেনে ব’সে ভাবলাম। মহীন্ও কামরার একপাশে ব’সে আছে। সে আমার সঙ্গে একটা কথাও বলে নি—জানলা দিয়ে পাণ্ডুর বিবর্ণ মুখে ভীত চোখে বাইরের দিকে শূন্যদৃষ্টিতে চেয়ে আছে। মহীনের যোগাযোগে ননী ঘোষ খুন করে নি তো? দুজনে মিলে হয়তো এ-কাজ করেচে! কিংবা এমনও কি হতে পারে না যে, মহীন্ই খুন করেচে, ননী ঘোষ নির্দ্দোষী?
তবে একটা কথা, ননী ঘোষের হাতেই খাতাপত্র—কত টাকা আসচে-যাচ্চে, ননীই তো জানতো, মহীন্ সেকরা সে খবর কি ক’রে রাখবে!…
তখুনি একটা কথা মনে পড়লো। গাঙ্গুলিমশায় ছিলেন সরলপ্রাণ লোক, যেখানে-সেখানে নিজের টাকা-কড়ির গল্প ক’রে বেড়াতেন, সবাই জানে।
মহীন্কে বল্লাম—তোমার দোকানে অনেকে বেড়াতে যায়, না?
মহীন্ যেন চমকে উঠে বল্লে—হ্যাঁ বাবু।
—গাঙ্গুলিমশায়ও যেতেন?
—তা যেতেন বইকি বাবু।
—গিয়ে গল্প-টল্প করতেন?
—তা করতেন বইকি বাবু!
—টাকাকড়ির কথা কখনো বলতেন তোমার দোকানে ব’সে?
—সেটা তো তাঁর স্বভাব ছিল—সে-কথাও বলতেন মাঝে মাঝে।
—ননী ঘোষের সঙ্গে তোমার খুব মাখামাখি ভাব ছিল?
—আমার দোকানে আসতো গহনা গড়াতে। আমার খদ্দের। এ থেকে যা আলাপ—তাছাড়া সে আমার গাঁয়ের লোক। খুব মাখামাখি ভাব আর এমন কি থাকবে? যেমন থাকে।
—তুমি আর ননী দু’জনে মিলে গাঙ্গুলিমশায়কে খুন ক’রে টাকা ভাগাভাগি ক’রে নিয়েচো—কেমন কি না?
এই প্রশ্ন ক’রেই আমি ওর মুখের দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে চেয়ে দেখলাম। ভয়ের রেখা ফুটে উঠলো ওর মুখে! ও আমার মুখের দিকে বড়-বড় চোখ ক’রে বল্লে—কি যে বলেন বাবু! আমি ব্রহ্মহত্যার পাতক হবো টাকার জন্যে! দোহাই ধর্ম্ম, আপনাকে সত্যি কথা বলচি বাবু!
কিছু বুঝতে পারা গেল না। কেউ-কেউ থাকে, নিপুণ ধরনের স্বাভাবিক অভিনেতা। তাদের কথাবার্তা, হাবভাবে বিশ্বাস করলেই ঠকতে হয়—এ আমি কতবার দেখেচি।
শ্যামপুরে ফিরে আমি গাঙ্গুলিমশায়ের ছেলে শ্রীগোপালের সঙ্গে দেখা করলাম।