শ্রীগোপাল বল্লে—থানা থেকে দারোগাবাবু আর ইন্স্পেক্টরবাবু এসেছিলেন। আপনাকে খুঁজছিলেন।
—তুমি গহনার কথা কিছু বল্লে নাকি তাঁদের?—না। আমি কেন সে-কথা বলতে যাবো? আমাকে কোন কথা তো ব’লে দেন নি?
—বেশ করেচো।
—ওঁরা আপনার সেই কাঠের তক্তামত-জিনিসটা দেখতে চাইছিলেন।
—কেন?
—সে-কথা কিছু বলেননি।
—তাঁরা ও দেখে কিছু করতে পারেন, আমি তাঁদের দিয়ে দিতে প্রস্তুত আছি, কিন্তু তাঁরা পারবেন ব’লে আমার ধারণা নেই।
বিকেলের দিকে আমি নির্জ্জনে ব’সে অনেকক্ষণ ভাবলাম।…আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মিস্মিজাতির কাষ্ঠনির্ম্মিত রক্ষাকবচের সঙ্গে এই খুনীর যোগ আছে। সেই রক্ষাকবচ প্রাপ্তি এমন একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা যে, আমার কাছে সেটা রীতিমত সমস্যা হয়ে উঠচে ক্রমশ।
ননী ঘোষের সঙ্গেও এর সম্পর্ক এমন নিবিড় হয়ে উঠেচে, যেটা আর কিছুতেই উপেক্ষা করা চলে না। শীতল পোদ্দারের দোকানের টাকার কথা যদি পুলিসকে বলি, তবে তারা এখুনি ননীকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু সে-দিক থেকে মস্ত বাধা হচ্ছে, সে-টাকা যে ননী ঘোষ দিয়েছিল মহীন্কে, তার প্রমাণ কি?
মহীনের কথার উপর নির্ভর করা ছাড়া এক্ষেত্রে অন্য কোনো প্রমাণ নেই!
শীতল পোদ্দারও তো ভুল করতে পারে।
হয়তো এমনও হোতে পারে, মহীন্ সেকরাই আসল খুনী। তার দোকানে ব’সে গাঙ্গুলিমশায় কখনো টাকার গল্প ক’রে থাকবেন—তারপর সুবিধে পেয়ে মহীন্ গাঙ্গুলিমশায়কে খুন করেচে, পোঁতা-টাকা পোদ্দারের দোকানে চালিয়ে এখন ননীর ওপর দোষ চাপাচ্ছে…
ননী ঘোষের সঙ্গে সন্ধ্যার সময় দেখা করলাম।
ওকে দেখেই কিন্তু আমার মনে কেমন সন্দেহ হোলো, লোকটার মধ্যে কোথায় কি গলদ আছে, ও খুব সাচ্চা লোক নয়। আমাকে দেখে প্রতিবারই ও কেমন হয়ে যায়!
লোকটা ধূর্ত্তও বটে। ওর চোখ-মুখের ভাবেও সেটা বোঝা যায় বেশ।
ওকে জিগ্যেস করলাম—তুমি মহীনের দোকান থেকে তাবিজ গড়িয়েছ সম্প্রতি?
ননী বিবর্ণমুখে আমার দিকে চেয়ে বল্লে—হ্যাঁ—তা—হ্যাঁ বাবু—
—অত টাকা হঠাৎ পেলে কোথায়?
—হঠাৎ কেন বাবু! আমরা তিনপুরুষে ঘি-মাখনের ব্যবসা করি। টাকা হাতে ছিল, তা ভাবলাম, নগদ টাকা পাড়াগাঁয়ে রাখা—
—টাকা নগদ দিয়েছিলেন, না, নোটে?
—নগদ।