—সব টাকা তোমার ঘি-মাখন বিক্রির টাকা?
—হ্যাঁ বাবু।
ননীকে ছেড়ে দিয়ে গ্রামের মধ্যে বেড়াতে বেরুলাম। ননী অত্যন্ত ধূর্ত্ত লোক, ওর কাছ থেকে কথা বার করা চলবে না দেখা যাচ্চে।
বেড়াতে-বেড়াতে গাঙ্গুলিমশায়ের বাড়ির কাছে গিয়ে পড়েছি, এমন সময় দেখি কে একজন ভদ্রলোক গাঙ্গুলিমশায়ের ছেলে শ্রীগোপালের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা কইচেন।
আমাকে দেখে শ্রীগোপাল বল্লে—এই যে! আসুন, চা খাবেন।
—না, এখন খাবো না। ব্যস্ত আছি।
—আসুন, আলাপ করিয়ে দিই…ইনি সুশীল রায়, আর ইনি জানকীনাথ বড়ুয়া, আমাদের পাড়ার জামাই—আমার বাড়ীর পাশের ওই বুড়ি-দিদিমার জামাই। উনিও একটু—একটু—মানে—ওঁকে সব বলেছিলাম।
আমি বুঝলাম, জানকী বড়ুয়া আর যাই হোক্, সে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আর-একজন প্রাইভেট্ ডিটেক্টিভ। মনটা হঠাৎ যেন বিরূপ হয়ে উঠলো শ্রীগোপালের প্রতি। সে আমার ওপর এরই মধ্যে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, এবং কোথা থেকে আর-একজন গোয়েন্দা আমদানি ক’রে তাকে সব ঘটনা খুলে বলছিল, আমাকে আসতে দেখে থেমে গিয়েচে।
আমি জানকীবাবুকে বল্লাম—আপনি কি বুঝচেন?
—কি সম্বন্ধে?
—খুন সম্বন্ধে।
—কিছুই না। তবে আমার মনে হয়—
—কি, বলুন?
—এখানকার লোকই খুন করেচে।
—আপনি বলছেন—এই গাঁয়ের লোক?
—এই গাঁয়ের জানাশোনা লোক ভিন্ন এ-কাজ হয় নি। ননী ঘোষের সম্বন্ধে আপনার মনে কি হয়?
আমি বিস্মিতভাবে জানকীবাবুর মুখের দিকে চাইলাম! তাহলে শ্রীগোপাল দেখচি ননী ঘোষের কথাও এই ভদ্রলোকের কাছে বলেচে! ভারি রাগ হোলো শ্রীগোপালের ব্যবহারে।
আমার ওপর তাহলে আদৌ আস্থা নেই ওর দেখচি।
একবার মনে হোলো, জানকীবাবুর কথার কোনো উত্তর আমি দেবো না। অবশেষে ভদ্রতা-বোধেরই জয় হোলো। বল্লাম—ননী ঘোষের কথা আপনাকে কে বল্লে?
—কেন, শ্রীগোপালের মুখে সব শুনেচি।
—আপনি তাকে সন্দেহ করেন?
—খুব করি! তার সঙ্গে এখুনি দেখা করা দরকার। তার হাতেই যখন টাকার হিসেব লেখা হোতো…