পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মিস্‌মিদের কবচ
১৯৫

—ছেলেপুলে কি আপনার?

—একটি ছেলে হয়েছিল, মারা গিয়েচে। এখন আর কিছুই নেই।

—ও।

হঠাৎ জানকীবাবু আমার মুখের দিকে চেয়ে আমায় জিগ্যেস করলেন—আচ্ছা, গাঙ্গুলিমশায়ের খুন সম্বন্ধে পুলিস কোনো সূত্র পেয়েচে ব’লে আপনার মনে হয়?

—কেন বলুন তো?

—আমার বিশেষ কৌতূহল এ-সম্বন্ধে। গাঙ্গুলিমশায় আমার শ্বশুরের সমান ছিলেন। বড় স্নেহ করতেন আমায়। তাঁর খুনের ব্যাপারের একটা কিনারা না হওয়া পর্য্যন্ত আমার মনে শান্তি নেই। আমার মনে কোনো অহঙ্কার নেই মশায়। আমি এ খুনের কিনারা করি, বা আপনি করুন, বা পুলিসই করুক, আমার পক্ষে সব সমান। যার দ্বারা হোক কাজ হলেই হোলো। নাম আমি চাইনে।

—নাম কে চায় বলুন? আমিও নয়।

—তবে আসুন-না আমরা মিলে-মিশে কাজ করি? পুলিশকেও বলুন।

—পুলিশ তো খুব রাজী, তারা তো এতে খুব খুশী হবে।

—বেশ, তবে কাল থেকে—

—আমার কোনো আপত্তি নেই।

—আচ্ছা, প্রথম কথা—আপনি কোনো কিছু সূত্র পেয়েচেন কিনা আমায় বলুন। আমি যা পেয়েচি আপনাকে বলি।

—আমি এখানে এখন বলবো না। পরে আপনাকে জানাবো।

—ননী ঘোষের ব্যাপারটা আপনি কি মনে করেন?

—সেদিন তো আপনাকে বলেচি। ওকে আমার সন্দেহ হয়। আপনি ওকে সন্দেহ করেন?

—নিশ্চয় করি।

—আপনি ওর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পেয়েচেন?

—সেই গহনা ব্যাপারটাই তো ওর বিরুদ্ধে একটা মস্ত বড় প্রমাণ।

—তা আমারও মনে হয়েচে, কিন্তু ওর মধ্যে গোলমালও যথেষ্ট।

—মহীন্ সেকরাকে নিয়ে তো? আমি মহীন্‌কে সন্দেহ করিনে।

—কেন বলুন তো?

—মহীন্ তো খাতা লিখতো না গাঙ্গুলিমশায়ের। ভেবে দেখুন কথাটা।

—সে-সব আমিও ভেবেচি। তাতেও জিনিসটা পরিষ্কার হয় না।

—চলুন না, দু’জনে একবার ননীর কাছে যাই।

—তার কাছে আমি গিয়েছিলাম। তাতে কোন ফল হবে না।

—হিসাবের খাতাখানা কোথায়?