এখুনি এই জুতোর সোলের একটা ছাঁচ নেওয়া দরকার। কিন্তু তার কোনো উপকরণ দুর্ভাগ্যের বিষয় আজ আমার কাছে নেই।
আমার মনে কেমন ভয় করতে লাগলো, আকাশের দিকে চাইলাম। কৃষ্ণপক্ষের ঘোর মেঘান্ধকার রজনী।
এমনি রাত্রে ঠিক গত কৃষ্ণপক্ষেই গাঙ্গুলিমশায় খুন হয়েছিলেন।
আমি শ্রীগোপালের বাড়ি গিয়ে ডাকলাম—শ্রীগোপাল, শ্রীগোপাল, ওঠো—ওঠো!
শ্রীগোপাল জড়িত-কণ্ঠে উত্তর দিলে—কে?
—বাইরে এসো—আলো নিয়ে এসো—সব বলচি।
শ্রীগোপাল একটা কেরোসিনের টেমি জ্বালিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বিস্মিতমুখে বার হয়ে এসে বল্লে—কে? ও, আপনি? এত রাত্রে কি মনে ক’রে?
—চলো বসি—সব বলচি। এক গ্লাস জল খাওয়াও তো দেখি!
—চা খাবেন? স্টোভ আছে। চা-খোর আমি, সব মজুত রাখি—ক’রে দিই।
চা খেয়ে আমি আর বসতে পারচি না। ঘুমে যেন চোখ ঢুলে আসচে! শ্রীগোপাল বল্লে—বাকি রাতটুকু আমার এখানেই শুয়ে কাটিয়ে দেবেন এখন।
ব্যাপার সব শুনে শ্রীগোপাল বল্লে—এর মধ্যে ননী আছে ব’লে মনে হয়। এ তারই কাজ।
—না।
—না? বলেন কি?
—না, এ ননীর কাজ নয়।
—কি ক’রে জানলেন?
—এখানকার লোক ছোরার ব্যবহার জানে না—বাংলাদেশের পাড়াগাঁয়ে ছোরার ব্যবহার নেই।
—তবে?
—এ-কাজ যে করেচে সে বাংলার বাইরে থাকে। তুমি কাউকে রাতের কথা বোলো না কিন্তু!
—আপনাকে খুন করতে আসার উদ্দেশ্য?
—আমি দোষী খুঁজে বার করবার কাজে পুলিসকে সাহায্য করচি—এছাড়া আর অন্য কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে?
ভোর হোলো। আমি উঠে আমার ঘরে চলে গেলাম।
জানলার বাইরে সেই পায়ের দাগ তেমনি রয়েচে। রবার-সোলের জুতো বেশ স্পষ্ট বোঝা যাচ্চে। ক’ নম্বরের জুতো তাও জানা গেল।
বিকেলে আমি ভাবলাম, একবার মামার বাড়ি যাবো। এ-গ্রামে ডাক্তার নেই