—এখন সেই লোক কে হতে পারে, তার একটা আন্দাজ ক’রে ফেলেচি। তার হাতের লেখার সঙ্গে এবার সেই পাতার লেখাটা মিলিয়ে দেখতে হবে।
—লোকটার বর্ত্তমান হাতের লেখা পাওয়ার সুবিধে হবে?
—যোগাড় করতে চেষ্টা করচি। যদি মেলে, আমি সন্দেহক্রমে তাকে পুলিসে ধরিয়ে দেবো।
—আমায় বলবেন, আমি গিয়ে গ্রেপ্তার ক’রে নিয়ে আসবো। ওয়ারেণ্ট বের করিয়ে নিতে যা দেরি।
—বাকিটুকু কিন্তু আপনাদের হাতে।
—সে ভাববেন না, যদি আপনার সংগৃহীত প্রমাণের জোর থাকে, তবে বাকী সব আমি ক’রে নেবো। এই কাজ করচি আজ সতেরো বছর।
আমি গ্রামে ফিরে একদিনও চুপ ক'রে বসে রইলাম না। এ-সব ব্যাপারে দেরি করতে নেই, করলেই ঠকতে হয়। জানকীবাবুর শাশুড়ীর সঙ্গে দেখা করলাম। শুনলাম, জানকীবাবু মাছ ধরতে গিয়েচেন কোথাকার পুকুরে—আর মাত্র দু'দিন তিনি এখানে আছেন—এই দু’দিনের মধ্যেই সব বন্দোবস্ত ক’রে ফেলতে হবে।
আমি বল্লাম—দিদিমা, জানকীবাবু আপনাকে কিছু-কিছু টাকা পাঠান শুনেচি?
—না দাদা, ও-কথা কার কাছে শুনেচো? জামাই তেমন লোকই নয়।
—পাঠান না?
—আরও উল্টে নেয় ছাড়া দেয় না। মেয়ে থাকতে তবুও যা দিতো, এখন একেবারে উপুড়-হাতটি করে না কোনোদিন।
—যাক্, চিঠিপত্র দিয়ে খোঁজখবর নেন্ তো—তাহোলেই হোলো।
—তাও কখনো-কখনো। বছরে একবার বিজয়ার প্রণাম জানিয়ে একখানা লেখে।
—খাম, না পোস্টকার্ড?
—হ্যাঁ, খাম না রেজিস্টারি চিঠি। তুমিও যেমন দাদা। মেয়ে বেঁচে না থাকলেই জামাই পর হয়ে যায়। তার উপর কি কোনো দাবী থাকে দাদা? দু’লাইন লিখে সেরে দেয়।
—কই, দেখি? আছে নাকি চিঠি?
—ওই চালের বাতায় গোঁজা আছে, দ্যাখো না।
খুঁজে-খুঁজে নাম দেখে একখানা পুরনো পোস্টকার্ড চালের বাতা থেকে বের ক’রে বৃদ্ধাকে প’ড়ে শোনালুম। বৃদ্ধা বললেন—ওই চিঠি দাদা।
আরও দু’একটা কথা ব’লে চিঠিখানা নিয়ে চলে এলাম সঙ্গে ক’রে। জানকীবাবু যদি একথা এখন শুনতেও পান যে, তাঁর লেখা চিঠি সঙ্গে ক’রে নিয়ে এসেচি, তাতেও আমার কোনো ক্ষতির কারণ নেই।
থানায় দারোগার সামনে ব’সে হাতের লেখা দুটো মেলানো হলো।
অদ্ভুত ধরণের মিল। দু’একটা অক্ষর লেখার বিশেষ ভঙ্গিটা উভয় হাতের লেখাতেই একই রকম।