পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



চতুর্দশ পরিচ্ছেদ



দারোগাবাবু বল্লেন—তবুও একজন হাতের লেখা-বিশেষজ্ঞের মত নেওয়া দরকার নয় কি?

—সে তো কোর্টে প্রমাণের সময়। এখন ওসব দরকার নেই। আপনি সন্দেহক্রমে চালান দিন।

—আমায় অন্য কারণগুলো সব বলুন।

—একে-একে সব বলবো।—তার আগে একবার কলকাতায় যাওয়া দরকার।

মি: সোমের সঙ্গে দেখা করলাম কলকাতায়। সব বললাম তাঁকে খুলে।

তিনি বল্লেন—একটা কথা বলি। তোমাদের সাক্ষীসাবুদ প্রমাণ-সূত্রাদির চেয়েও একটা বড় জিনিস আছে। এটা সূত্র ধ’রে অপরাধী বের করতে বড্ড সাহায্য করে। অন্তত আমায় তো অনেকবার যথেষ্ট সাহায্য করেচে। সেটা হলো—অঙ্কশাস্ত্র। অঙ্ক, chanceএর আঁক কষে বোঝা যায় যে, একজন লোক যে আসামে থাকে বলবে, অথচ দাঁতন করবে, অথচ তার হাতের লেখার সঙ্গে যাকে সন্দেহ করা হচ্চে তার হাতের লেখার হুবহু মিল থাকবে, এ-ধরণের ব্যাপার হয়তো তিন হাজারের মধ্যে একটা ঘটে। এক্ষেত্রে যে সে-রকম ঘটেচে, এমন মনে করবার কোন কারণ নেই—সুতরাং ধ’রে নিতে হবে এ সেই লোকই।

সেদিন কলকাতা থেকে চলে এলাম। আসবার সময় একবার থানার দারোগাবাবুর সপে দেখা করি। তিনি বল্লেন, আপনি লোক পাঠালেই আমি সব ব্যবস্থা করবো।

—ওয়ারেণ্ট বার হয়েচে?

—এখনও হস্তগত হয়নি, আজ-কাল পেয়ে যাবো।

গ্রামে ফিরে দু'দিন চুপচাপ বসে রইলাম শ্রীগোপালের বাড়ীতে। খবর নিয়ে জানলাম, জানকীবাবু দু’একদিনের মধ্যেই এখান থেকে চলে যাবেন। থানার দারোগার কাছে চিঠি দিয়ে আসতে ব’লে দিলাম।

পকেটে মিস্‌মিদের কবচখানা রেখে আমি জানকীবাবুর সন্ধানে ফিরতে থাকি এবং একটু পরে পেয়েও যাই। জানকীবাবুকে কৌশল ক’রে নির্জ্জনে গাঁয়ের মাঠের দিকে নিয়ে গেলাম।

আজ একবার শেষ পরীক্ষা ক’রে দেখতে হবে। হয় এস্‌পার, নয় ওস্‌পার!

জানকীবাবু বল্লেন—আপনার কাজ কতদূর এগুলো?

—এক পাও না। আপনি কি বলেন?

—আমি তো ভাবচি, ননীর সম্বন্ধে থানায় গিয়ে বলবো।

—সন্দেহের কারণ পেয়েচেন?

—না পেলে কি আর বলচি?

—আচ্ছা জানকীবাবু, আপনি বুঝি আসামে ছিলেন?

—কে বল্লে?

—আমি শুনলাম যেন সেদিন কার মুখে।